সময় এখন ডেস্ক:
ফারাক্কা বাঁধের সব কটি লকগেটই খুলে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর ফলে পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশ’ঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা ও মহানন্দায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী: ভারতের উত্তরপ্রদেশ, মালদহ ও বিহারে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। এতে উপচে পড়ছে সেখানকার বিভিন্ন নদনদীর পানি। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গেও অতিবৃষ্টির কারণে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ফারাক্কা বাঁধের সব কটি লকগেট একসঙ্গে খুলে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এর জেরে ভারতের মুর্শিদাবাদের একাংশ ও বাংলাদেশের রাজশাহীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবন্যার আশ’ঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি লকগেট খুলে দেওয়ায় পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
ইতোমধ্যে কয়েক সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে পদ্মায়। ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল সন্ধ্যায় রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, এর ফলে উজান থেকে পদ্মায় আসা পানিতে এ অঞ্চলে বন্যা হতে পারে। এর জন্য আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক জানান, সোমবার সকাল ৬টায় রাজশাহীতে পদ্মায় পানি ছিল ১৭.৯০ সেন্টিমিটার। সারাদিনে তা বেড়ে সন্ধ্যা ৬টায় ১৮.১ সেন্টিমিটার হয়।
তিনি বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। রাজশাহী পদ্মার পানির বিপদসীমা ধরা হয় ১৮.৫০ সেন্টিমিটার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ মিমি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এতে নতুন আরও পাঁচটিসহ মোট ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, পদ্মায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার .৫৬ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ২২.৫০ সেমি) এবং মহানন্দায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার .৫৮ সেন্টিমিটার (বিপদসীমা ২১ সেমি) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আশ’ঙ্কা রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার আলাতুলি, নারায়ণপুর, চর অনুপনগর, শাহজাহানপুর ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এ ৫ ইউনিয়নের ২ হাজার ২শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, দুর্লভপুর, মনাকষা, উজিরপুর, ধাইনগর, ঘোড়াপাখিয়া ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
চরবাগডাঙ্গা ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মো. কামরুজ্জামান টুটুল জানান, এ ইউনিয়নের গোঠাপাড়া, বাগানপাড়া, চাকপাড়া, গিধনিপাড়া, মালবাগডাঙ্গা গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রাড ৫শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরবাগডাঙ্গা বিওপি এলাকার গিধনিপাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
শাহজাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম জানান, হাকিমপুর, সেকালিপুর রাবনপাড়া, দুর্লভপুর ও নরেন্দ্রপুরের কিছু অংশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৪শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে ক্ষ’তিগ্রস্ত পরিবার রান্না করতে পারছে না।
চর অনুপনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, নতুনপাড়া, বিশ্বাসপাড়া, লম্বাপাড়া, মোন্নাপাড়া, চর অনুপনগর বাগানপাড়া, কলাবাগান ও চরকাশেমপুর ক্যানেলপাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৪শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানান, পাকা, দুর্লভপুর, মনাকষা, উজিরপুর, ধাইনগর, ঘোড়াপাখিয়া ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আরও ত্রাণের জন্য চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক মো. মঞ্জরুল হুদা বলেন, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ৭ হাজার ৫শ হেক্টর মাষকলাই তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ৫শ ৮০ হেক্টর সবজি ও ৭০ হেক্টর হলুদ নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, আলাতুলি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ৫শ পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৪শ ক্ষ’তিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক একেএম তাজকির-উজ-জামান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পানিবন্দি ক্ষ’তিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে শুকনো খাবারের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
284