জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মা’দকের ভয়া’বহতা কমছে না। প্রথম বর্ষ থেকেই ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছেন মা’দকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট কিছু স্থান এবং আবাসিক হলের কিছু কক্ষকে ড্রা’গস সেবনের অলিখিত স্পট বানিয়ে ফেলেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও এসে ভিড়ছে তাদের সাথে।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ১ অক্টোবর জাবির ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ছাদ থেকে প্রকাশ্যে মা’দক সেবনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীসহ ৫ বহিরাগতকে আটক করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
এর আগে গত ৩১ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইজারল্যান্ড নামক স্থান থেকে মা’দকসহ ৫ তরুণীসহ ১০ বহিরাগতকে আটক করে জাবি প্রশাসন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জানিয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে জাবি প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা শাখার কাছে নে’শা করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা আটক হয়েছেন।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে কখনো সিগা-রেটও ছুঁইনি। এখানে আসার পরে গণরুমে বন্ধুদের থেকে দেখে ধুমপান শুরু করি। পরে বড় ভাইদের কাছ থেকে গাঁ-জা, ফেন্সিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।’ এভাবেই নিজের কথা বলেন বাম রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের এক মেধাবী ছাত্র।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু জায়গা সন্ধ্যার পর আখড়ায় পরিণত হয়। সেসব স্থানসহ আবাসিক হলগুলোর ছাদ ও নির্দিষ্ট কিছু কক্ষেও রাতে নানারকম নে’শার আসর বসে। আর বিভিন্ন উৎসবে ছাত্র হলগুলোতে মদ্য-পান তো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অন্তত ২০-২৫ জায়গায় নিয়মিত আসর বসে। সন্ধ্যার পর এসব জায়গা দিয়ে গেলে হঠাৎ করেই নাকে আসে মা’দকের গন্ধ। শুধু সন্ধ্যা বা রাত নয়, দিনের বেলায়ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে চলে নে’শাজাত দ্রব্য সেবন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের মা’দক সেবনের আলাদা আলাদা গ্রুপ আছে। এজন্য স্থানও নির্ধারণ করা থাকে। সন্ধ্যা বা রাতে সবাই নির্দিষ্ট স্থানে হাজির হন। এই এক জায় বিভিন্ন দল, মত ও পক্ষের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়, কোনো দ্বিমত ছাড়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, উঁচু বটতলার দোকানগুলোর পেছনে, মওলানা ভাসানী হল ও রফিক জব্বার হলের মধ্যকার জায়গা, জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, সুইজারল্যান্ড, সুইমিংপুল, পরিবহন চত্বর, চিকিৎসাকেন্দ্র সংলগ্ন স্থান, টারজান পয়েন্ট, টিএসসি, ব্যাংকের পাশে, বিশমাইলের কর্মচারী ক্লাব সংলগ্ন স্থান, রাঙামাটি, বিভিন্ন যাত্রী ছাউনি, মুক্তমঞ্চসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত আসর বসে। বিভিন্ন হলের এমন প্রায় অর্ধশত কক্ষের তথ্য পেয়েছেন এ প্রতিবেদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশপাশি ও বহিরাগতরাও এসব স্থানে নিয়মিত ড্রা’গস সেবন করতে আসে। সেবন শেষে আবার যার যার এলাকায় চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগসাজশেই তারা এসব করছে। অনেক সময় বহিরাগতরাই ক্যাম্পাসে নে’শাজাত দ্রব্য সরবরাহ করছে।
শুধু ছাত্ররা নয়, অনেক ছাত্রীও নে’শার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে। জাবির ভেতরে ও বাহিরে একাধিক স্থানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ধরনের নে’শাজাত দ্রব্য। ক্যাম্পাসের বটতলার খাবারের দোকানের কর্মচারী ও নিরাপত্তা শাখার কিছু সদস্য এসব সরবরাহ করে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেকেই ক্যাম্পাসে ড্রা’গস সরবরাহ করছে। আর এতে কিছু ছাত্রনেতার যোগসাজশ রয়েছে।
আবাসিক হলে নে’শাজাত দ্রব্য সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, আমরা হলে নিয়মিত অভিযানের চেষ্টা করছি। এ সম্পর্কে হলেগুলোর প্রভোস্টদের জানানো হবে। আর এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আমরা সোচ্চার। আমরা কোনো খবর পেলেই সেখানে গিয়ে খোঁজ নিই। আর কাউকে হাতেনাতে ধরতে পারলে তার বিরু’দ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়।