সময় এখন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো করে দেশের আর কোনো প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের নিয়ে ভাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা: অর্জন ও মানোন্নয়নে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর কল্যাণ সুবিধার অর্থ দ্রুত ছাড় করতে উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য দেন শিক্ষকেরা।
নওফেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বলতে পারবেন না, এসব খাতে এতো বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই দুই খাতে তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
অবসর কল্যাণ সুবিধা তহবিল নিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী সেই ফান্ডের মধ্যে আরো টপ-আপ করেছেন যাতে দীর্ঘ’সূত্রিতা না থাকে। অবসর ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ পেতে দীর্ঘ’সূত্রিতা কমেছে।
তিনি বলেন, আমি অবাক হয়ে গেলাম, তিনি সচিব মহোদয় এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন, এখন আর কতটুকু গ্যাপ আছে, অ্যাভারেজে কতটুকু দীর্ঘ’সূত্রিতা হয়? এভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ-অবসরের পয়সা পেতে কত সময় লাগে- এতো চিন্তা, সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যেও চিন্তা করছেন। আমরা এভাবে কখনও চিন্তা করতে পারিনি এভাবে তিনি কোনো শিক্ষকের কথা চিন্তা করেন।
অনুষ্ঠানে বরিশালের একজন অধ্যক্ষ তার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে বর’খাস্ত করার বিষয়টি তুলে ধরলে উপমন্ত্রী তার জের টেনে বক্তব্য দেন।
ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষকদের যদি আমরা সঠিকভাবে মূল্য দিতে না পারি, তারা যদি সঠিকভাবে জ্ঞান চর্চা করতে না পারেন এবং অর্ধ শিক্ষিত বা অ’শিক্ষিত ব্যক্তির দা’পট বা নির্দেশনা বেশি থাকলে সেখানে শিক্ষাদান এবং জ্ঞান চর্চার পরিবেশ কোনোভাবেই থাকবে না।
অশিক্ষাই সেখানে বিস্তৃত হবে এবং নৈতিকতা ধ্বং’স হয়ে যাচ্ছে। তিনি কীভাবে নৈতিকতা শিখাবে, এটা বাস্তবতা।
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষকদের আরো কীভাবে দক্ষ করা যায় তা তুলে ধরে শিক্ষকদের সফটওয়্যারের সঙ্গে তুলনা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অবকাঠামোগুলো সব হার্ডওয়্যার। চাইলে আমরা হার্ডওয়্যার তৈরি করে দিতে পারি। কিন্তু এই হার্ডওয়্যার চালাবে কে? হার্ডওয়্যার চালানোর সফটওয়্যার আমাদের শিক্ষকেরা। সফটওয়্যার ঠিকভাবে না চললে হার্ডওয়্যার সঠিকভাবে কাজ করবে না। সফটওয়্যার ভালো না হলে হার্ডওয়্যার চলবে কীভাবে? এটাই বাস্তবতা। এজন্য শিক্ষকদের উন্নতমানের সফটওয়্যার হতে হবে।
শিক্ষকদের অবসরে যাওয়ার বিষয়ে উপমন্ত্রী বলেন, ৬০ বছরে তারা অনেক বিজ্ঞ হন। কিন্তু ওয়াইজ ব্রেনে যখন বিদায় নিতে হয়, এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কল্যাণ তহবিল, অবসর সুবিধা এবং পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তাব আহ্বান করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কথা তুলে ধরে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেছেন, যে সমাজে অনেক বড় বৈ’ষম্য হয়েছে, অনেকে অনেকভাবে ধন সম্পদ অর্জন করেছে, যারা অ’নৈতিকভাবে করেছে এবং সম্পদের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে এই বৈ’ষম্যকে আরো বেশি প্রকাশ করবার যে ধৃ’ষ্টতা দেখায়, রাজস্বে কোনো অবদান রাখে না কিন্তু বিলাসিতা করছে- এই সার্বিক অবস্থার বিরু’দ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য (এমপি) তাহমিনা বেগম। বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি এবং রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ।
বাকবিশিসে’র নির্বাহী সভাপতি সিরাজুল হক আলো, সহ-সভাপতি এবং অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি বক্তব্য রাখেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাকবিশিসে’র সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম ফারুক।