যুবলীগ অফিসের পিয়ন আনিস আজ শত কোটি টাকার মালিক!

0

সময় এখন ডেস্ক:

প্রথম ছবিটি শুক্রাবাদের বাড়ি, ২য় ছবি গোপালগঞ্জের ও ডানে ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বিএনপি’র আমলে আওয়ামী যুবলীগ অফিসের পিয়ন কাজী আনিসের। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চাকরি পাওয়ার পর মাসিক বেতন ছিল সাকুল্যে ৩ হাজার টাকা। ২০১২ সালে তার সেই বেতন বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা।

শরিয়তপুর জেলার পালং উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল হাশেম কাজী আনিসকে যুবলীগ অফিসের এই চাকরির ব্যবস্থা করেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ছেলেটি বড়ই অ’সহায়। কম্পিউটার চালাতে জানে। ব্যস, হয়ে গেল চাকরি। যুবলীগ নেতাদের চা-পানি এনে খাওয়ানোই ছিল আনিসের কাজ।

২০১২ সালের যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের পর ভাগ্য বদলে যায় আনিসের। পিয়ন থেকে পদোন্নতি পেয়ে আনিস দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাসিম রূপককে উপ-দপ্তর সম্পাদক পদ দেওয়া হলে ক্ষো’ভে তিনি তা গ্রহণ করেননি।

জানা গেছে, দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পরই ভাগ্য পাল্টে যেতে থাকে আনিসের। ৩ হাজার টাকা বেতনের সেই অ’সহায় ছেলেটি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে হয়ে ওঠেন টাকার কুমির। মাত্র ৭ বছরের মধ্যেই কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার মালিক এখন তিনি।

ঢাকার শুক্রাবাদে বিশাল বাড়ি ছাড়াও ধানমন্ডিতে রয়েছে তার অনেকগুলো ফ্ল্যাট। ব্যাংকে নামে-বে’নামে বিপুল অর্থ জমা রয়েছে তার। ২টি জাহাজও তিনি কিনেছেন। এছাড়া বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কমিটি বাণিজ্য ও ক্যাসিনোর ভাগ বাটোয়ারা করেই আনিস এই বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হন।

মাত্র ৩ হাজার থেকে ক্যাসিনোর কল্যাণে শত কোটি টাকার মালিক আনিস। কী নেই তার! বাড়ি, ফ্ল্যাট ছাড়াও দোকানের সংখ্যা ২০টিরও উপর। গোপালগঞ্জে ফিলিং স্টেশন, এমনকি বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সবই আছে তার। আনিসের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে।

জানা গেছে, রাজধানীর শুক্রাবাদে কাঁচাবাজারের পাশের ৭ তলা বাড়ির ১৩টি ফ্ল্যাটের মালিক কাজী আনিস। এই বাড়ির কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, কাজী আনিসের হয়ে তার শ্যালক এখানে ভাড়া নিতে আসে।

জানা গেছে, শুক্রাবাদের পাশে ধানমন্ডির ১০ নম্বর রোডের ২২/এ নম্বরে একটি ১৩ তলা ভবনে প্রায় ৩ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিকও কাজী আনিস। এই ফ্ল্যাটের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা।

ধানমন্ডি এলাকা খুব পছন্দ আনিসের। তাই ওই ফ্ল্যাটের আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলেই ধানমন্ডি ৯ নম্বর সড়ক। সেখানে রয়েছে যুবলীগ চেয়ারম্যানের অফিস। সেই অফিসের উপরের ফ্লোরটি তাই কিনেই নিলেন আনিস। প্রায় ৪ হাজার বর্গফুট! প্রতি বর্গফুটের খরচ ১৪ হাজার ৪৬০ টাকা। সব মিলিয়ে দাম পড়েছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকারও বেশি। এখানেই কিন্তু শেষ নয়। নিজ জন্মস্থান গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরেও রয়েছে তার আলিশান প্রাসাদ। আছে শখের বাগানবাড়িও।

কাজী আনিসের হাতে আলাদীনের কোনো চেরাগ নেই। আছে শুধু যুবলীগের একটি কেরানি সমতুল্য দপ্তর সম্পাদক পদ। এবার দেরিতে হলেও দুর্নীতির বিরু’দ্ধে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এসব পদক্ষে’পকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেছেন, আগে অনেকেই কথা দিয়েছেন কিন্তু রাখেননি। এখন ধারার পরিবর্তন হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আনিসদের পাশাপাশি তাদের তৈরি করার নে’পথ্য কারিগর’দেরও মুখোশ খুলতে হবে। যাদেরকে সি’ন্ডিকেট বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুন !
  • 728
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!