সময় একন ডেস্ক:
যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরু’দ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ ছিল সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। অবশেষে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন রিমান্ডে নিয়ে একে একে অভিযোগগুলোর তদন্ত করা হবে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলে সম্রাটের প্র’ভাব এত বেশি ছিল যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়া তাকে গ্রেপ্তার করতে ইতস্তত বোধ করছিল র্যাব-পুলিশ।
অভিযোগ পাওয়া যায়, প্রতি রাতে রাজধানীর ১৫টি ক্যাসিনো থেকে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে নিতেন সম্রাট। সদ্য বহি’ষ্কৃত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও টেন্ডার কিং জি কে শামীমের সব অ’বৈধ আয়ের ভাগ দিতে হতো সম্রাটকে।
আবার মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল, বাড্ডা এলাকায় অপরাধজগতের একক আধি’পত্য তৈরি করে চাঁদা’বাজি করতেন সম্রাট। পলাতক শীর্ষ সন্ত্রা’সী জিসান আহমেদের সঙ্গে মিলে ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাট। যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতো একটি বড় ইউনিটের সভাপতি হওয়ার সুবাদে তার ছিল বিশাল বাহিনী।
তিনি কাকরাইলের অফিসে অবস্থান করলেও কয়েক’শ নেতা-কর্মী সব সময় তাকে ঘিরে রাখতেন। অফিস থেকে বের হয়ে কোথাও গেলে তাকে প্রটোকল দিতেন শতাধিক নেতা-কর্মী। অ’বৈধ উপার্জনের টাকা দিয়েই এ বাহিনী পালতেন তিনি।
‘ক্যাসিনো সম্রাট’ রাজধানীর জুয়াড়িদের কাছে বেশ পরিচিত নাম। সম্রাটের নে’শা ও ‘পেশা’ জুয়া খেলা। তিনি একজন পেশাদার জুয়াড়ি। প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন সিঙ্গাপুরে যেতেন জুয়া খেলতে। সেখানে টাকার বস্তা নিয়ে যেতেন। সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় জুয়ার আস্তানা মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকেও আসেন জুয়াড়িরা। সেখানেও সম্রাট ভিআইপি জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
প্রথম সারির জুয়াড়ি হওয়ায় সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করার বিশেষ ব্যবস্থাও ছিল। এয়ারপোর্ট থেকে মেরিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনো পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হতো বিলাসবহুল গাড়ি লিমুজিন-এ করে। সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গেলে সম্রাটের নিয়মিত সঙ্গী হতেন যুবলীগ দক্ষিণের নেতা আরমানুল হক আরমান, মমিনুল হক সাঈদ ওরফে সাঈদ কমিশনার, সম্রাটের ভাই বাদল ও জুয়াড়ি খোরশেদ আলম।
এদের মধ্যে সাঈদ কমিশনারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তিনি ১৫ বছর আগেও ঢাকায় গাড়ির তেল চু’রির ব্যবসা করতেন। এখন তিনি এলাকায় যান হেলিকপ্টারে চড়ে। এমপি হতে চান আগামী দিনে, যার তোড়জোড় শুরু হয়েছে এখন থেকে। দোয়া চেয়ে এলাকায় সাঁটানো হয়েছে পোস্টার।
সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত ভিআইপি জুয়া খেলা চলত। ক্যাসিনোবিরো’ধী অভিযান শুরুর আগে প্রতিদিনই ঢাকার একাধিক বড় জুয়াড়িকে সেখানে জুয়া খেলার আমন্ত্রণ জানানো হতো। কিন্তু সম্রাটের কার্যালয়ে খেলার নিয়ম ছিল ভিন্ন। সেখান থেকে জিতে আসা যাবে না। কোনো জুয়াড়ি জিতলেও তার টাকা জো’রপূর্বক রেখে দেওয়া হতো।
নিপী’ড়নমূলক এই জুয়া খেলার পদ্ধতিকে জুয়াড়িরা বলেন ‘চুঙ্গি ফিট’। অনেকে এটাকে ‘অল ইন’ও বলেন। জুয়া জগতে ‘অল ইন’ শব্দটি খুবই পরিচিত। অল ইন মানে সব টাকা পয়সা সেখানেই রেখে আসা। সংসারের ঘটিবাটি বিক্রি করে একেবারে ফতুর হয়ে যাওয়ার মতোই জুয়াড়িদের অল ইন হওয়া।
গ্রেপ্তারের পর সম্রাটের স্ত্রী শারমিন চৌধুরীও বলেছেন, সম্রাটের নে’শাই ছিল জুয়া খেলা।
ক্যাসিনো-কান্ডে ইতিমধ্যে যাদেরই জিজ্ঞাসা’বাদ করা হয়েছে, তারাই সম্রাটের নাম বলেছেন। তার সহযোগী হিসেবে নাম এসেছে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কাউন্সিলর ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক ওরফে সাঈদ, যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ওরফে আরমানসহ আরও কয়েকজনের।
মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে অ’বৈধ ক্যাসিনোর ছড়াছড়ি। এর মধ্যে ইয়ংমেন্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্রাটের শিষ্য খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
বাকি ৫টি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাটের ক্যাসিনোর দেখাশোনা করতেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। তারা ১ বছর আগে পল্টনের প্রীতম জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো চালু করেছিলেন। অভিযান শুরু হওয়ার পর মমিনুল সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান।
61