যেভাবে ৬ ঘণ্টার ফুটেজ দেখে শনাক্ত ১৯ অভিযুক্ত, তাদের নাম-

0

সময় এখন ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলায় থাকা সিসিটিভির ৬ ঘণ্টার ফুটেজ থেকে অপরাধীরা শনাক্ত হয়েছেন। রবিবার রাত ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে কারা ঢুকেছেন বা বের হয়েছেন সেই ২০১১ নম্বর কক্ষটিতে। কারা আবরারকে নিয়ে যাচ্ছেন সেই কক্ষটিতে। আবার কারা তাকে মারধ’রের পর সেই কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে আসছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও বুয়েট শিক্ষার্থীদের মতে, ভিডিও ফুটেজে থাকা সবাই দায়ী না হলেও তারাই জানেন কারা জড়িত এই হ’ত্যাকান্ডে। রবিবার দিবাগত রাতে বুয়েটের শের বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে আবরার ফাহাদকে পি’টিয়ে হ’ত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ হ’ত্যাকান্ডের অভিযোগে ছাত্রলীগের ১৩ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় হ’ত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

শিক্ষার্থীরা ৬ ঘণ্টার এই ভিডিও ফুটেজের জন্য সোমবার দিনভর বিক্ষো’ভ করে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টের কক্ষের সামনে। একপর্যায়ে অবরু’দ্ধ করা হয় পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের। পরে রাত ৯টায় অ’বিকৃত অবস্থায় এই ফুটেজ হস্তান্তরের পরই অবরু’দ্ধ পরিস্থিতির অবসান হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আবরারকে তার কক্ষ থেকে রাত ৮টা ১৩ মিনিটে ২য় বর্ষের ৫ জন এসে ডেকে নিয়ে যায় দোতলায়। তারা আবরারকে নিয়ে যাওয়ার সময় হেলমেট হাতে একজন আসে সেখানে। আবরার দোতলায় উঠে যায় অন্যদের সঙ্গে। পরে রাত দেড়টায় আবরারকে মারধ’রের পর কক্ষ থেকে বের করা হয়।

প্রথমে একজনকে বারান্দা দিয়ে কিছুটা দৌড়ে এসে দাঁড়াতে দেখা যায়। এরপর তিনি একই পথে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর আবরারকে ৩ জন ধরাধরি করে নিয়ে আসেন। তাদের পেছনে একজনকে হেঁটে আসতে দেখা যায়, তার পেছনে আরেকজন হেঁটে আসেন। এর পরপরই আরও ৫ জন ওই বারান্দা দিয়ে হেঁটে আসেন।

শিক্ষার্থী ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরে বাংলা হলের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদের মুঠোফোন নিয়ে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করেন। এরপর ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারকে পে’টান। কিছুক্ষণ পর ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী আসেন। তারা আরেক দফা পে’টান আবরারকে।

এক পর্যায়ে আবরার নিস্তে’জ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগের নেতারা আবরারের হলের সহপাঠীদের ডেকে আনেন এবং তাদের দিয়ে নি’থর দেহটি দোতলা ও নিচতলার মাঝামাঝি সিঁড়িতে নিয়ে রাখেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতারা বাইরে যান রাতের খাবার খেতে। পরে যখন নিশ্চিত হলো আবরার বেঁচে নেই, তখন সিঁড়ি থেকে লা’শ নিয়ে রাখা হয় হলের ক্যান্টিনে। ভোরে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে।

হলের প্রাধ্যক্ষ জাফর ইকবাল খান বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে খবর পাই যে এক শিক্ষার্থী পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েটের চিকিৎসক দিয়ে তাকে পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসক জানান, সে বেঁচে নেই। পরে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বুয়েট শিক্ষার্থী সাইয়েদ ঈমাদ উদ্দিনের মতে, আবরার ফাহাদকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে ’১৫ ও ’১৬ ব্যাচ খুব পে’টায়, তখনো সে জীবিত। পরে তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেয়া হয়। এই কাজটা জড়িতরা আবরারের ব্যাচ ’১৭-এর শিক্ষার্থীদের দিয়েই করিয়েছে। এরপর তারে ২০০৫ থেকে নিস্তে’জ অবস্থায় সিঁড়ির কাছে রাখা হয়, যেখানেই সে মা’রা যায়।

কাজেই এই ভিডিওতে আসল খু’নিরা ছিলই না। কিন্তু রুমে যাদের যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মাধ্যমে খু’নিদের সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। তবে প্রায় ১৮ জনকে খু’নের সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করা গেছে। আর ২০১১ নম্বর কক্ষে কিছু খু’নি ছিল যারা বের হয়নি বলে চিহ্নিত করা যায়নি। সবাই ’১৫ এবং ’১৬ ব্যাচের।

চিহ্নিতরা হলেন- মেহেদী হাসান (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৩তম ব্যাচ), মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ), অনীক সরকার (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ১৫তম ব্যাচ), মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), ইফতি মোশারফ হোসেন (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), মনিরুজ্জামান মনির (পানিসম্পদ বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ),

মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), মাজেদুল ইসলাম (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোজাহিদুল (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), তানভীর আহম্মেদ (এমই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), আকাশ (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ),

শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), তানীম (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ) এবং মোয়াজ মনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ)।

শেয়ার করুন !
  • 106
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!