অপ’প্রচার-গুজবের কারনে ভ’য়াবহ রূপ নিয়েছে সাইবার অপরাধ

0

সময় এখন ডেস্ক:

ক্রমেই অ’নিরাপদ হয়ে পড়ছে সাইবার জগৎ। ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে অপ’প্রচার চালানো, ছবি বি’কৃতি এবং কুৎ’সা রটানোর মাধ্যমে অন্যের সম্মানহা’নি ঘটানো যেন এখানে অতি সাধারণ ব্যাপার। ছোটখাটো বিষয়ে সরকারের বিরু’দ্ধে নানা অপপ্র’চারের পাশাপাশি চলছে জ’ঙ্গিবাদের উস্কানিও।

এসব ঘটনায় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পাশাপাশি বেশি ক্ষ’তিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। সংঘ’বদ্ধ একটি চক্র, রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মানীয় ব্যক্তিদের হে’য় করার চেষ্টা করে চলছে অবিরত। এ ছাড়া কারও নামে সংঘ’বদ্ধভাবে মিথ্যা অপ’প্রচার চালিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইনের চোখে অপরাধী বানানোরও অপ’চেষ্টা করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এসব অপরাধ এখন ভ’য়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করে এমন তথ্যই মিলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের শক্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা না থাকা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় সাইবার অপরাধের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। ঘটনাগুলো এখন শুধু ভার্চুয়াল জগতেই নেই, জাতীয় নিরাপত্তায়ও হুম’কি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনে ফেসবুকে অপ’প্রচার ও গুজব যেভাবে বেড়েছে, তাতে সাময়িক সময়ের জন্য এ সাইটটিকে বন্ধ করা যেতে পারে বলেও মত তাদের।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জনপ্রিয় তারকাদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়ে ফেক ফেসবুক পেজ খোলা হয়। অনেকে তারকাদের ছবি দেখে সেই পেজে যান। মূলত এসব পেজ থেকে যারা গুজব ছড়ায়, তাদের ৮০-৯০ শতাংশের টার্গেট সরকার, প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধ। অনেকে সরকারের জনপ্রিয় পরিকল্পনাকে বিত’র্কিত করার অপ’চেষ্টা চালিয়ে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইট ও অ্যাপগুলোর মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমেই সাইবার অপরাধের ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে। এ ছাড়া কিছু অ’খ্যাত অনলাইন পোর্টালও নানা ধরনের অপ’প্রচারে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, গুজব ছড়ানোর ষড়-যন্ত্রের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের হাত রয়েছে। নিজের পরিচয় লুকাতে অনেক কু’ৎসা রটনাকারী ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করেন। ফলে তাদের শনাক্ত করা জটিল হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আইন যেমন শক্ত না, যেটুকু আছে তারও যথাযথ ব্যবহার হতে দেখছি না। তাই সাইবার অপরাধ বাড়ছে।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি, ফেসবুকের মাধ্যমে নানাভাবে মানুষকে হেন’স্তা করা হচ্ছে। কুৎ’সা রটিয়ে সম্মানহা’নির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারকে নানা ধরনের বি’ব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতেও একটি গ্রুপ ফেসবুকে সক্রিয় আছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের সামাজিক অপরাধ রোধ করতে হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কঠিন ভাষায় কথা বলতে হবে। তারা সহযোগিতা না করলে প্রয়োজনে ফেসবুক এ দেশে বন্ধ করে দিতে হবে।

সাইবার অপরাধ ঠেকাতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ মনিটরিং জরুরি বলেও মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার বলেন, বর্তমানে সাইবার অপরাধ এমন ভ’য়াবহ আকার ধারণ করেছে, যেটা এখন শুধু সাইবার জগতেই নেই, জাতীয় নিরাপত্তায় হুম’কি হিসেবেও দাঁড়িয়েছে। নানা ধরনের গুজব অপ’প্রচার ছড়িয়ে সামাজিক রাজনৈতিক অ’স্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে নানা ধরনের দুর্ঘটনা, সং’ঘাত এমনকি হ’ত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।

তিনি বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দু’র্বৃত্তদের মনে ভয়টা কেটে যায়। অপরাধীরা মনে করে, আইনের ওপর যেমন তাদের হস্ত’ক্ষেপ রয়েছে, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণেও তারা পার পেয়ে যাবে। তাই সাইবার অপরাধ প্র’তিরোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে অপরাধীদের মনে ভয় ধরাতে হবে।

সাইবার অপরাধ প্র’তিরোধে আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকাই এ ধরনের অপরাধ কমছে না বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সাইবার অপরাধ প্র’তিরোধ আইনে সাজা হয়েছে, এমন ঘটনা খুব একটা নেই। ফলে এ অপরাধ করলে কী ধরনের শা’স্তি হতে পারে সেটা অপরাধীরা বুঝতে পারছে না।

আইনে কঠিন সাজা:

সাইবার অপরাধ প্র’তিরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে সরকার। এই আইনের বিভিন্ন ধারায় সাইবার অপরাধের জন্য কঠিন শা’স্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা চালায়, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরি’মানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভ’য়ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষ’তি করে, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরি’মানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরি’মানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইনের ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কারও বিরু’দ্ধে কুৎ’সা রটালে, মানহা’নিকর কোনো তথ্য দিলে ৩ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরি’মানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অ’রাজকতা সৃষ্টি করলে ৭ বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকা জরি’মানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন !
  • 80
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!