রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
মাগরিবের আজান দেয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের ছাত্রীদের জন্য এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
মঙ্গলবার দেয়া ওই নির্দেশনা সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নির্দেশনার সমালোচনা করেছেন অনেকেই। এটিকে সান্ধ্য আইন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই নিয়ম কার্যকর হলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে ব’ঞ্চিত হবেন।
মন্নুজান হলের নোটিশ বোর্ডে দেয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রক্টর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ মোতাবেক মন্নুজান হলে অবস্থানরত সকল ছাত্রীদের সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট সময়ের (মাগরিবের আযানের ২০ মিনিট পর পর্যন্ত) মধ্যে হলে প্রবেশের জন্য বলা হচ্ছে। অন্যথায় নিয়ম ভ’ঙ্গকারীর বিরু’দ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বা হল প্রভোস্টের কোনো স্বাক্ষর ছিল না। এমনকি কোনো তারিখও লেখা নেই। এ বিষয়ে প্রক্টর কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করলেও প্রভোস্ট নোটিশটি দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
ওই বিজ্ঞপ্তিটি নজরে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ওপর ক্ষো’ভ প্রকাশ করেছেন।
ওই বিজ্ঞপ্তিটি ফেসবুকে শেয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক ছাত্রী তমাশ্রী দাস লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিচ্ছু থাকবে না। শুধু শিক্ষার্থীদের কথা বলা বন্ধ থাকবে। আর এদিক-ওদিক হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনানুগ ব্যবস্থাটা আসলে কী? স্বায়ত্বশা’সিত প্রতিষ্ঠানে কীভাবে শিক্ষার্থীদের বিরু’দ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা জানা নাই।
ওই নিয়ম তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সৌদা জামান বলেন, আমরা মেয়ে হলেও মানুষ। আমাদেরও স্বপ্ন আছে। আমাদের স্বপ্ন পূরনের সুযোগ দিন। এমনভাবে চললে বাড়িতে বসে কলেজে অনার্স করার পথই বেছে নিতে হবে ভবিষ্যৎ রাবি শিক্ষার্থী (মেয়েদের)। আর দেখা হবে না মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় গড়ার স্বপ্ন।
মাহমুদুল হাসান পারভেজ তার ফেসুবকে লিখেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তালিবানি নিয়ম জারি রেখেছে প্রশাসন। যাকে সান্ধ্য আইন বলে। সন্ধ্যার মধ্যেই হলে ঢুকতে হবে মেয়েদের। ছেলেদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও পেয়েছিলাম এমন পৈ’শাচিক নিয়ম। মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের ভিসি, প্রক্টর, প্রশাসন কেমন করে এই নিয়ম জারি রাখে?
হলের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে তারিখ-স্বাক্ষর না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের প্রভোস্ট ড. সাবিনা ইয়াছমিন গণমাধ্যমকে বলেন, এটি অনেক আগের নোটিশ। ছিঁড়ে গেছে, ন’ষ্ট হয়েছে- তাই আবার দেয়া হয়েছে। যখন প্রশাসন থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছিল, তখনকার নোটিশ এটি। আগের নোটিশটি প্রিন্ট করে দেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার স্বাক্ষর ও তারিখ দিয়ে নতুন করে সেই বিজ্ঞপ্তি আবার নোটিশ বোর্ডে দেয়ার কথাও জানান প্রভোস্ট।
163