সময় এখন ডেস্ক:
‘প্রিয় বাবা, তোমার শূ’ন্যতা খুব বেশি অনুভব করছি। সকালে জেগে ওঠার জন্য এখন আর কেউ বকাবকি করে না। বাড়ির যে গাছগুলোতে রোজ পানি ছিটিয়ে সজীব করে রাখতে তুমি, তারাও এখন খুব বি’ষণ্ন, নি’র্জীব। ট্রাফিক সিগনালে লালবাতি জ্বলে উঠলে যে ভিখারীটি গাড়ির কাচের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, সেও তোমার বেশ অ’ভাববোধ করছে।
আমি, আমরা সবাই তোমার অপেক্ষায় দিন গুনছি। বাবা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি ফিরে এসো বাবা। একবার আমি তোমাকে ড্যাড বলে ডাকতে চাই’-ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পা।
এই চিঠিটি লিখেছিলেন চট্টগ্রামের বারবার নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পা। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দীন চৌধুরী ১/১১’র সময় গ্রেপ্তারের পর কারাগা’রে থাকাকালে চিঠিটি লিখেছিলেন টুম্পা। মহিউদ্দীন চৌধুরী আজ নেই। নেই টুম্পাও। তার মৃ’ত্যুর ১০ বছর কেটে গেছে।
টুম্পার ১১ তম মৃ’ত্যুবার্ষিকীতে তার লেখা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তুলে ধরেছেন তার ভাই শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
প্রিয় বোনের লেখা চিঠিটি নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তুলে ধরে বাবা ও বোনকে স্মরণ করেছেন। স্ট্যাটাসে নওফেল লিখেছেন- ‘জনকের প্রতি আবেগঘন উষ্ণতা মেখে আমার আদরের ছোট বোন অভিমানী ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পার জীবনের প্রথম এবং শেষ চিঠি’।
টুম্পার চিঠি দিয়ে দেয়া নওফেলের স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। অনেকেই লাইক দিয়েছেন। মন্তব্য করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
জানা গেছে, মহিউদ্দীন চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ছিলেন টুম্পা। ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর ক্যান্সারাক্রা’ন্ত হয়ে তিনি মা’রা যান। একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মেয়ে হলেও টুম্পার জীবন ছিল সাদাসিধে। তার মধ্যে অহং’বোধ ছিল না।
তার শিক্ষক প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন এ বিষয়ে বলেন, টুম্পা অনেক সাধাসিধে ছিল। তার বাবা মেয়র- এই বিষয়টি আমরা অনেকেই জানতাম না। ১/১১’র সময় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেপ্তার হলে জানতে পারি টুম্পা তার মেয়ে।
ক্যান্সাোক্রা’ন্ত টুম্পা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃ’ত্যুর আগে পিতার সঙ্গে শেষ দেখা করতে পারেনি। এমনকি টুম্পাকে শেষ দেখার জন্য মহিউদ্দীনকে প্যারোলে মুক্তি দেয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, যদি সিঙ্গাপুর যান, তবে মামলা থেকে অ’ব্যাহতি দেয়া হবে। তবে আর ফিরতে পারবেন না।
মহিউদ্দীন চৌধুরী সেদিন বলেছিলেন, আমি আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে এই অবস্থায় রেখে কোথাও যাব না।