এবার সুনামগঞ্জে ছেলেকে লুকিয়ে রেখে কিডন্যাপ নাটক বাবার!

0

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

শিশু তুহিনের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ছেলেকে লুকিয়ে রেখে কিডন্যাপ নাটক সাজিয়ে ধরা পড়েছে পিতা। সে নাটকের যবনিকাপাত ঘটিয়েছে পুলিশ।

কিডন্যাপ নাটকের ১১ দিন পর পিতা মো. আজিজুর রহমান ওরফে হেকমত আলীর হেফাজত থেকে রিমন মিয়া নামে ৯ বছরের ওই শিশুপুত্রকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মো. আজিজুর রহমান ওরফে হেকমত আলী উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পিরিজপুর গ্রামের হাদিস মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার আজিজুরকে ভ্রাম্যমাণ আদালত গণউপ’দ্রব সৃষ্টির অপরাধে সাজা দিয়ে জেলা কারাগা’রে পাঠিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, নিজ শিশু সন্তানকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে কিডন্যাপের নাটক সাজান হেকমত আলী। সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমানের দিক নির্দেশনায় এ ঘটনার ১১ দিন পর সুনামগঞ্জের আবদুজ জহুর সেতুর মুখ থেকে বুধবার রাতে শিশু রিমনকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় ওই শিশু পিতা হেকমতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের দুই স্ত্রী জামেনা বেগম ও লিপিয়া বেগমকে ঘিরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে গত ২২ বছর ধরে। প্রথম স্ত্রী জামেনার গর্ভের ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে, ২য় স্ত্রী লিপিয়ার গর্ভের ৩ মেয়ে ও ৬ ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী পৃথক থাকলেও আজিজুর ২য় স্ত্রীর লিপিয়ার সঙ্গেই জীবনযাপন করে আসছেন।

এদিকে প্রথম স্ত্রী জামেনা নিজের ও সন্তানদের নিয়ে দিনমজুরির আয়ের টাকায় কয়েক বছর পূর্বে আজিজুরের কিছু জমি ক্রয় করেন। কিন্তু সে জমি ভোগদখ’ল করে আসছেন আজিজুর। সেই জমির দখ’ল বুঝে নিতে গেলে শুরু হয় ১ম-২য় স্ত্রীর পক্ষ থেকে আদালতে দায়ের করা হয় একে অপরকে ফাঁ’সানোর জন্য পাল্টাপাল্টি মামলা।

এক পর্যায়ে জমির দখ’ল বুঝিয়ে না দিতে প্রথম স্ত্রী জামেনা, তার সন্তান ও মেয়ে জামাইদের ফাঁ’সাতে গিয়ে আজিজুরের সহযোগিতায় ২য় স্ত্রী লিপিয়া বেগম নিজের ৯ বছরের শিশুপুত্র রিমনকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে কিডন্যাপের নাটক সাজায়। পরে ৬ অক্টোবর তাহিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ২য় স্ত্রী লিপিয়া বেগম।

পরে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের দিক নির্দেশনায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শিশু রিমনের অবস্থান কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চণ্ডীবের গ্রামে তার খালুর বাসায় শনাক্ত করেন অভিযোগের তদন্তপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাহিরপুর থানার এসআই মো. গোলাম মোস্তাফা।

মঙ্গলবার রাত থেকে মামলার তদন্তকারী অফিসার একদল পুলিশ নিয়ে ভৈরবের চণ্ডীবের গ্রাম হতে ভিক্টিমকে উদ্ধার করতে গেলে চতুর গুণধর পিতা আজিজুর ফের নিজ শিশুপুত্র রিমনকে গুম বা হ’ত্যার পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন।

বুধবার সকালে খালুর বাড়ি থেকে রিমনকে অন্যত্র নেয়া হয়। রাতে বাসযোগে যাওয়ার পথে তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ শহরের প্রবেশমুখ আবদুজ জহুর সেতুতে মামুন পরিবহন নামের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে রিমনকে উদ্ধার ও আজিজুরকে গ্রেপ্তার করেন।

এ ঘটনায় বুধবার রাতেই আজিজুরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুনতাসির হাসান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আজিজুরকে ১ মাসের কারাদ’ণ্ড দেন।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সময় মতো শিশু রিমনকে পুলিশ উদ্ধার করতে না পারলে হয়তো এ শিশুকেও দিরাইয়ের শিশু তুহিনের মতো পরিণতি হতো।

শেয়ার করুন !
  • 863
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!