সময় এখন ডেস্ক:
যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি (বহি’ষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে জিজ্ঞাসা’বাদে বেরিয়ে আসছে অজানা সব তথ্য। কাদেরকে তিনি সুবিধা দিতেন এবং বিনিময়ে নির্বি’ঘ্নে ক্যাসিনো সাম্রাজ্য ও চাঁদা’বাজি টিকিয়ে রেখেছিলেন তা জানিয়েছেন সম্রাট।
ক্লাবগুলোতে অ’বৈধ ক্যাসিনো কারবার এবং চাঁদা’বাজি চালিয়ে যেতে প্রভাব’শালী সংসদ সদস্য, যুবলীগ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়মিত টাকা দিয়েছেন। এই সুবিধার বিনিময়ে তিনি কোনো সমস্যায় পড়লে তারা সহযোগিতা করতেন। তিনিও তাদের নাম ভাঙিয়ে চলতেন। র্যাবের জিজ্ঞাসা’বাদে এসব কথা বলেছেন সম্রাট। সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭ জনকে ‘খুঁটির জোর’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, সম্রাট তার খুঁটি হিসেবে যাদের নাম-পরিচয় দিয়েছেন তারা হলেন- গোপালগঞ্জের একজন সংসদ সদস্য (এমপি), যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, বর্তমানের এক এমপি যিনি আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) পূর্ব বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) এবং মতিঝিল অপরাধ বিভাগের আরেকজন এডিসিকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়েছেন সম্রাট।
তার দাবি, এ ৭ জনই ছিলেন ক্যাসিনোসহ তার সব কারবারে খুঁটির জোর। সম্রাটের অ’পকর্মের সঙ্গে এই ৭ ব্যক্তির সম্পর্ক খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে সম্রাটের বিপুল পরিমাণ টাকা পাচা’রের তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরু’দ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র আরো জানায়, গ্রেপ্তারের পরই সম্রাট তার ৭ খুঁটির জোরের কথা বলেছেন। এরপর রিমান্ডে জিজ্ঞাসা’বাদেও একই ধরনের দাবি করেছেন। তিনি বলছেন, টাকা তো অনেকে খেয়েছে! আমি একা ফাঁসব কেন? প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা (সাবেক) মাগুরার এক নেতাকে প্রতি মাসে টাকা দিতেন সম্রাট। ওই ‘ভাইয়ের’ সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে অনেকে তাকে সমীহ করত। সম্রাটের দাবি করা সেই ‘বড় ভাই’ এখন এমপি।
ক্যাসিনো কারবারে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের টাকার বড় ভাগটি নিতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা কাওছার। তাকে সেখান থেকে আয়ের ৩৫ শতাংশ টাকা পকেটে নেওয়ার ব্যবস্থা সম্রাটই করে দেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সম্রাট অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তার অ’বৈধ আয় থেকে ডোনেশন দিয়েছেন। অনেক ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে এসেছেন। তবে অ’বৈধভাবে ক্যাসিনো চালাতে এবং চাঁদা’বাজি অ’ব্যাহত রাখতে তিনি কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়মিত ১০ লাখ থেকে অর্ধকোটি টাকা পর্যন্ত মাসে ‘নজরানা’ দিয়েছেন। এই তালিকায় সবার ওপরে গোপালগঞ্জের একজন প্রভাব’শালী এমপি, যার সঙ্গে সম্পর্ক আছে প্রকাশ করে প্রভা’ব দেখাতেন সম্রাট।
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে টাকা দেওয়ার পাশাপাশি তার বিভিন্ন প্রয়োজনও মেটাতেন সম্রাট। কর্মী ও ক্যাডার সরবরাহ করার দায়িত্বও ছিল সম্রাটের। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে কখনো ‘বস’, কখনো ‘লিডার’ কখনো ‘গুরু’ বলে ডাকতেন সম্রাট।
কাকরাইলে তার দখ’ল করা ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের ৫ তলায় শাওনের জন্য আলিশান অফিস করে দেন সম্রাট। এ ছাড়া চাঁদা’বাজিসহ অনেক কাজে শাওনের সহায়তা নেন তিনি। শাওনও বিভিন্ন কাজে সম্রাটকে ব্যবহার করতেন। ভিক্টোরিয়া ক্লাবে কাউন্সিলর সাঈদের মাধ্যমে সংগৃহীত টাকার একটা অংশ যেত শাওনের হাতে।
গত মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত দুই মামলায় সম্রাটের ৫ দিন করে ১০ দিন এবং আরমানের এক মামলায় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই দিন বিকেলেই দুজনকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
বুধবার মামলার তদন্তভার র্যাবে হস্তান্তর করা হলে বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে দুজনকে জিজ্ঞাসা’বাদের জন্য র্যাব-১ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গতকাল ছিল সম্রাট ও আরমানের রিমান্ডের ৪র্থ দিন।
4.9K