চট্টগ্রাম ব্যুরো:
ভোলার ঘটনার জেরে হাটহাজারীতে বিক্ষো’ভের সময় ব্যারিকেড দিয়ে মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকালে বিক্ষো’ভ চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। মন্দিরের নিরাপত্তায় মাদ্রাসা ছাত্রদের এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভোলার ঘটনাকে পুঁজি করে শৃঙ্খলা ন’ষ্টকারী কিছু মাদ্রাসাছাত্র হাটহাজারী সীতাকালী মন্দিরে ইট-পাটকেল নি’ক্ষেপ করার চেষ্টা করলে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের আটকে দেন এবং মন্দিরে হাম’লা যাতে করতে না পারে এ জন্য তারা বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোলায় সহিং’সতার ঘটনার প্রতিবাদে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার সামনে মাদ্রাসার বিক্ষু’দ্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা মহাসড়কে হাটহাজারী মাদ্রাসার সম্মুখে, হাটহাজারী বাজার, মেডিকেল গেট, ভূমি অফিসের সামনে, কলেজ গেট ও বাসস্টেশন এলাকার মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরো’ধ করে রাখে।
এ সময় বাসস্টেশন চত্বরে বিক্ষু’দ্ধ শিক্ষার্থীরা মাগরিবের নামাজ আদায় ও অগ্নিসং’যোগ করতে দেখা গেছে। হঠাৎ ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পৌঁছায় প্রায় ৩০টি রুটের হাজার হাজার যাত্রীসাধারণকে দু’র্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
অবরো’ধের ফলে সাধারণ যাত্রীদের ভয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া হাটহাজারী বাজারের শত শত দোকান-পাট বন্ধ করে দোকানিরা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে দেখা গেছে।
বিক্ষু’দ্ধ শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে হাটহাজারী মডেল থানায় ইট-পাটকেল নি’ক্ষেপ করে মূল ফটক ও কাঁচের দরজা এবং জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী সীতাকালী মন্দিরে ইট-পাটকেল নি’ক্ষেপ করার চেষ্টা করলে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের আটকে দেয় এবং মন্দির রাক্ষায় হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে যান।
বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচায়ক হয়ে পাশাপাশি অবস্থান করছে দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বাইতুল করিম নামে প্রধান জামে মসজিদ প্রকাশ ‘বড় মসজিদ’ এবং ‘শ্রী শ্রী সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দির’। মসজিদ ও মন্দিরে শুধু এক দেয়ালের ফারাক। যা শুধু এ দেশে নয়, বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।
প্রায় শত বছরের পুরানো এ মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘ সময় ধরে পূজা-অর্চনা করে আসলেও এ নিয়ে কারও মধ্যে কোনো বৈ’রি অবস্থা তৈরি হয়নি।
সীতাকালী মন্দির পরিচালনা কমিটি ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি উদয় সেন বলেন, বহির্বিশ্বে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অপ্রী’তিকর ও অনা’কাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটলেও এ উপজেলার চিত্র ছিল ব্যতিক্রম। শুনেছি, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও এখানে একে-অপরের ওপর হাম’লা তো দূরে থাক, উল্টো মাদ্রাসার ছাত্ররাই পাহারা দিয়ে মন্দিরকে রক্ষা করেছেন। শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম যার যার অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।
১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হাটহাজারী মাদ্রাসা। ১১৯ বছরের ইতিহাসে হিন্দু সম্প্রদায় ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অপ্রী’তিকর ঘটনার ইতিহাস নেই।
এমনটা দাবি করে হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি জসিম উদ্দিন জানান, সুপ্রাচীন কালী মন্দিরের সীমানা দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া এই মাদ্রাসা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুই ধর্মের অনুসারীরা সহাবস্থানে থেকে যার যার মতো করে ধর্মীর আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন।
ভিন্ন ধর্মের দুটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি থেকে যার যার মতো করে ধর্মীয় রীতি পালন করছেন তারা। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অসাধারণ একটি উদারহরণ।
4.2K
১ Comment
এ রকমই সবসময় চাই ..