সময় এখন ডেস্ক:
৭ বছর দায়িত্বে থাকার পর ক্যাসিনোকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগসহ নানা কারণে যুবলীগের শীর্ষ পদ থেকে বাদ পড়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। রোববার তাকে সংগঠনের এ দায়িত্ব থেকে অ’ব্যাহতি দিয়েছেন যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে ওমর ফারুক মনে করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে অ’ব্যাহতি দেয়ার পেছনে দায়ী তাকে ঘিরে গণমাধ্যমের অতি’রঞ্জিত খবর। মিডিয়া ট্রায়ালে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর তো রাজনীতি করতে পারবো না। এখন নতুন পথ ধরতে হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দুদিন চুপচাপ ছিলেন ওমর ফারুক। সোমবার তিনি গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দেন।
৭১ বছর বয়সী এ নেতা দীর্ঘ ৭ বছর চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে ছিলেন সংগঠনটির। নানা বিত’র্কিত কর্মকাণ্ড ও ঔদ্ধ’ত্যপূর্ণ আচরণের কারণে আওয়ামী লীগের বৃহৎ এই সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নিতে হলো তাকে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
৭ম জাতীয় কংগ্রেস সামনে রেখে রোববার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে ওমর ফারুককে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওমর ফারুক চৌধুরীসহ সংগঠনটির প্রভাবশালী ৪ নেতা এদিন অনুপস্থিত ছিলেন।
তারা হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ এবং শেখ আতিয়ার রহমান দীপু। এদের মধ্যে শেষের ২ জন গণভবনের গেট থেকে ফেরত আসেন। এদের প্রায় সবার বিরু’দ্ধে ক্যাসিনোবাণিজ্যের সুবিধাভোগ করার অভিযোগ রয়েছে।
যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদচ্যুত হওয়ায় পেছনে গণমাধ্যমকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমার বিরু’দ্ধে এখনও তেমন কিছু প্রমাণ হয়নি। তবে যা হয়েছে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে হয়েছে। হোক; গণমাধ্যম আজ স্বাধীন এবং গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়াই উচিত।
ওমর ফারুকের ভাষ্য, আপনারা (সাংবাদিক) লেখনীর মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, আমি আর দল করতে পারব না, রাজনীতি করতে পারব না। মিডিয়া ট্রায়াল শেষ। আমাকে দল থেকে অ’ব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর মানে ‘ইউ আর নো মোর’। এখন আমি যতই সত্য কথা বলি, তা মিথ্যা ফিকশন হয়ে যাবে। তাই আর কিছু বলতে চাই না।
ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার পর পদচ্যুত হওয়ার আগেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। প্রায় ১ মাস ধরে যাননি দলীয় কার্যালয়ে। আসন্ন কংগ্রেসের কার্যক্রম থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমে যা লেখা হচ্ছে, তাতে কি আর সানন্দে বাইরে যাওয়া যায়? সে জন্য বাইরে যাই না, ঘরেই থাকি। আমার উচিত সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণ করা, সেই প্রক্রিয়াতেই আছি।
তিনি যোগ করেন, আমি তো শা’স্তি পেয়েছি-ই। কয়েক দিন ধরে গৃহবাস এবং রোববার দল থেকে গেট আউট। ক’ষ্ট যা পাওয়ার পেয়েছি। সর্বোচ্চ ক’ষ্ট পেয়েছি। এখন তো আর রাজনীতি করতে পারব না, নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে।
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের কাছ থেকে মাসিক মাসোহারা নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে ওমর ফারুক বলেন, সম্রাট রিমান্ডে কী বলেছেন তা আপনি নিজে দেখেছেন বা শুনেছেন কী? উনি (সম্রাট) যা খুশি বলতে পারেন। এসব তথ্য আমলে নিয়ে বিচারপ্রক্রিয়া কেমন হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি।
প্রথমে ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। পরে তা জ’ব্দ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, হ্যাঁ, হয়েছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদি তারা প্রমাণ করতে পারে, আমার অ্যাকাউন্টে অ’নৈতিক জায়গা থেকে টাকা ঢুকেছে, তা হলে আমার উচিত হবে সেটিকে আইনিভাবে মোকাবেলা করা। সর্বোপরি যদি প্রমাণ করতে পারি আমি নির্দোষ, তা হলে মুক্তি পাব; অন্যথায় দেশের প্রচলিত আইনে যা হওয়ার হবে। আমি আইনিভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।
সম্প্রতি যুবলীগের বিভিন্ন নেতার বিরু’দ্ধে দুর্নীতি, অ’বৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর থেকে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নামও উঠে আসে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরো’ধী অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমসহ অনেকেই। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পৃক্ততাও বেরিয়ে আসে।
তার আলোকে ইতিমধ্যেই ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা ছাড়াও তার বিদেশ যাত্রার ওপর নি’ষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। এই পরিস্থিতিতে তাকে ছাড়াই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সংগঠনটি। তাকে ছাড়াই হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভা।
অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগর ও দেশব্যাপী জেলা কমিটিগুলোও হয়েছেন তার পকেটের লোক দিয়ে।
৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের দায়িত্ব পেয়েই ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। সাবেক নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই একটি বিশাল কমিটি গঠন করেন তিনি।
অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি অনেক নেতাকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ফ্রিডম পার্টি ও যুবদলের অনেকে টাকার বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগে।
ওমর ফারুক চেয়ারম্যান হওয়ার পর যুবলীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন সুবিধাভোগী ও দু’র্বৃত্তরা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সময়কার পিয়ন আনিসুর রহমান কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক পদ পেয়ে যান ওমর ফারুকের কল্যাণে। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে এমন অনেককে নেতা বানানোর ক্ষেত্রে আনিসুর রহমানের ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে।
আনিস যুবলীগ অফিসের ৩ হাজার টাকা বেতনের পিয়ন থেকে এখন বিপুল সম্পদের মালিক। তিনি ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘কালেক্টর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ৩০ লাখ থেকে কোটি টাকার বিনিময়ে আনিসের মাধ্যমে পদ পেয়েছেন অনেকেই।
485