প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে কারণে দূরত্ব তৈরী হয়েছে শেখ সেলিমের

0

বিশেষ প্রতিবেদন:

এক সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আত্মীয়তাই নয়, আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন শেখ সেলিম। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও বটে।

যদিও ২০০৮ থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি একবারও মন্ত্রী হননি। কিন্তু মন্ত্রী না হলেও মন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন সেলিম। বিভিন্ন সময় ঈদ-পূজা বা অন্যান্য উৎসবে প্রধানমন্ত্রী যখন সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন তখন শেখ সেলিমকে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই দেখা যেত।

দলের বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ সেলিমের সঙ্গে পরামর্শ করতেন বলেই জানা যায়। কিন্তু সেই শেখ সেলিমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির কেন দূরত্ব তৈরি হলো সে প্রশ্ন অনেকেরই। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, মোটামুটি ৩টি কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ সেলিমের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

প্রথমত, যুবলীগের যারা অভিযুক্ত যেমন- সম্রাট, খালেদ, জি কে শামীমরা সকলেই শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠ ছিল। নির্বাচনের পরপরই শেখ সেলিম জি কে শামীমের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জি কে শামীমকে আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একটি পদ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন শেখ সেলিম। সম্রাট খালেদদের সঙ্গেও ছিল তার সুসম্পর্ক। এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়াই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ সেলিমের দূরত্বের একটি প্রধান কারণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

দ্বিতীয়ত, শেখ সেলিমের বিরু’দ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি পুলিশের ব্যাপারে নাক গলান। বিভিন্ন থানায় ওসি কে হবেন না হবেন ইত্যাদি ব্যাপারেও শেখ সেলিম প্রভা’ব বিস্তার করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ড. জাবেদ পাটোয়ারী আইজি (মহাপরিদর্শক) হওয়ার পর তিনি পুলিশের সৎ ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পুলিশে রদবদলের পূর্ণ কর্তৃত্ব দেন।

এরপরে পুলিশে আওয়ামী লীগ হিসেবে পরিচিত অনেক কর্মকর্তা যারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ছিলেন তাদের বদলি করা হয়। এর মধ্যে প্রলয় কুমার জোয়ার্দারকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নরসিংদী পাঠানো হয়। হাবিবুর রহমানকেও বদলি করা হয়। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব সরকারকে রংপুরে পাঠানো হয়।

পুলিশের যে সিন্ডিকেট সেটা ভে’ঙে দেন ড. জাবেদ পাটোয়ারী। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি তখন পুলিশ সিন্ডিকেটের বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করেন। এটাও জানান যে, এই পুলিশ সিন্ডিকেটের পেছনে কে আছেন। এই বিষয়টি শেখ সেলিমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে অ’বনতি হওয়ার বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তৃতীয়ত, অ’ব্যাহতি পাওয়া যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ছিলেন শেখ সেলিমের বোনের জামাই। তার বিরু’দ্ধে কমিটি বাণিজ্যের যে অভিযোগগুলো বিভিন্ন সময় এসেছিল সেসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ সেলিমের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেন।

এ বিষয়ে শেখ সেলিমকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার জন্যেও পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। এটাও শেখ সেলিমের ওপর প্রধানমন্ত্রীর অ’সন্তোষের একটি বড় কারণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মূলত এই ৩টি কারণেই শেখ সেলিমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দূরত্ব তৈরি হয়।

বাংলাইনসাইডার

শেয়ার করুন !
  • 2.1K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!