মেরামতের দাবিতে মহাসড়কে রোপিত গাছে এসেছে ধান, জনপ্রতিনিধিরা নির্বিকার

0

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের কারণে লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কটি এখন ম’রণফাঁদে পরিণত হয়েছে। লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। সেখানে জমে আছে বৃষ্টির পানি। চলাচল অনু’পযোগী হয়ে পড়েছে মহাসড়কটি। এ অবস্থায় চরম দু’র্ভোগে পড়েছে ত্রিদেশীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ ও অন্য পথচারীরা। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

পাটগ্রাম উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় ২ মাস আগে সং’স্কারের দাবি জানিয়ে মহাসড়কের ওপরে ধানের চারা রোপণ করেন স্থানীয়রা। ২ মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি মহাসড়ক সং’স্কার। ২ মাসে মহাসড়কের ওপর লাগানো ধান গাছে বের হয়েছে শীষ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম স্থলবন্দর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক এবং ভারত-ভুটান-নেপালের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ঢাকার পথে যাওয়া-আসায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক।

কিন্তু ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি মহাসড়কটি চলাচলের অ’যোগ্য হয়ে পড়েছে। নিম্ন’মানের সং’স্কারকাজ, বৃষ্টির পানি জমে থাকা ও অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করায় মহাসড়কটির সহস্রাধিক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

খানাখন্দে পড়ে প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। মহাসড়কে বিকল হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। গর্তে পড়ে একটি ট্রাক বিকল হলে দীর্ঘ যানজটে না’কাল হচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যে ম’ন্দাভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভো’গান্তি এড়াতে বাইপাস সড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ।

জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে চলা মহাসড়কটির পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট-১) অংশ চলাচলের জন্য কিছুটা ভালো থাকলেও কালীগঞ্জ-আদিতমারী (লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিজ এলাকা) অংশটি একেবারে অ’কেজো। খোদ মন্ত্রীর বাড়ির সামনের মহাসড়কে হাজারো খানাখন্দ।

সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসনের অংশটিরও একই অবস্থা। যদিও একই বরাদ্দে গত অর্থবছরে পুরো মহাসড়কটি সং’স্কার করা হয়েছে। এরপরও আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার অংশের প্রতি মাসে সং’স্কারের নামে জোড়া-তালি দিয়ে যোগাযোগ সচল রেখেছে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

স্থানীয় ট্রাকচালক মন্তাজ মিয়া বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে এখন ধানের শীষ বেরিয়েছে। আমরা এই মহাসড়ক সং’স্কারের জন্য অনেক দাবি প্র’তিবাদ করেছি। কিন্তু আজো কোনো কাজ হয়নি। মহাসড়কটি দেশের সবচেয়ে ঝুঁ’কিপূর্ণ একটি সড়ক। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই মহাসড়কে গাড়ি চালাই না। মহাসড়কটিকে ‘ম’রার সড়ক’ বলা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আজমল হুদা বলেন, মহাসড়কটির বে’হাল দশার কারণে এলাকার লোকজন ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। ধান বের হলেও এখনো মহাসড়কটি সং’স্কার হয়নি। দেশে জনপ্রতিনিধি আছে বলে মনে হয় না।

স্থানীয় ট্রাকচালক জব্বার হোসেন বলেন, সদর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে গেলেই ট্রাক বি’কল হয়ে যায়। কখনো ট্রাক উল্টে মালামাল ন’ষ্ট হয়। জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে এ মহাসড়কে চলতে হয়। জীবনের ঝুঁ’কি নিয়ে পেটের দায়ে ট্রাক চালাই। দীর্ঘদিন মহাসড়কটি এভাবে পড়ে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাটগ্রামগামী মাত্র ১০ কিলোমিটার অংশে প্রশস্তকরণ ও সং’স্কারকাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান। সম্প্রতি এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পুরো মহাসড়ক সং’স্কার করার মতো বরাদ্দ নেই।

লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বখতিয়ার আলম বলেন, সড়কের পাশে উঁচু মার্কেট ও ভারী যানবাহনের কারণে মহাসড়কটি স্থায়ী হচ্ছে না। গত জুন মাসে মহাসড়কটির পুরো অংশ সং’স্কার করায় নতুন করে সং’স্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। সওজের নিজস্ব তহবিল থেকে মাঝে মধ্যে সড়কের গর্তগুলো ভরাট করা হয়। তবে সেই বরাদ্দও না থাকায় আপাত সং’স্কার করা যাচ্ছে না। বরাদ্দের চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সং’স্কার করা হবে।

তিনি বলেন, মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয়ায় শক্তভাবে সং’স্কার করার কাজও হাতে নেয়া যাচ্ছে না। তবে সেই ৪ লেনের প্রকল্পের কাজ শুরু হতে ৩/৪ বছর সময় লাগবে।

শেয়ার করুন !
  • 313
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!