সময় এখন ডেস্ক:
শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেও গুলশানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়িতে চলত অ’বৈধ মদের বার ও ক্যাসিনো। এখানে বেশিরভাগ যাতায়াত ছিল বিদেশিদের। বাড়ির প্রতিটি ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের সঙ্গে যুক্ত ছিল গোপন সুড়ঙ্গের। কোনো ধরনের সমস্যা মনে হলেই এ সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদে বাইরে পালানোর ব্যবস্থা ছিল।
রোববার মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানের আগেই এ সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যান আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদ। টানা ৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, শিসা, বিয়ার, ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধার করেন মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
আটক করা হয় বাড়ির দুই কেয়ারটেকার নবীন মণ্ডল ও পারভেজকে। এ ঘটনায় সোমবার গুলশান থানায় মা’দক আইনে ২টি মামলা করা হয়েছে। মামলা নং- ৩৪ ও ৩৫। ৩৪ নং মামলায় আসামি করা হয়েছে বাড়ির দুই কেয়ারটেকার নবীন মণ্ডল ও পারভেজকে। আর ৩৫ নম্বর মামলায় আসামি করা হয়েছে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদকে।
এছাড়া ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধারের বিষয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। তবে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার অপর ভাতিজা আহাদ মোহাম্মদ বিদেশে থাকায় তাদের মামলায় আসামি করা হয়নি।
এদিকে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব স্থ’গিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তলব করা হয়েছে তার ব্যক্তিগত ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য। এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে একটি চিঠি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
মা’দক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, মা’দক আইনে দুটি মামলা এবং ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধারের বিষয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
মামলা দুটি তদন্ত করবে মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আর ক্যাসিনোর বিষয়টি তদন্ত করবে পুলিশ। তদন্তে কারও নাম উঠে এলে তাকে মামলায় যুক্ত করা হবে। তিনি জানান, বাসা থেকে মদের বার ও ক্যাসিনো সরঞ্জামাদি উদ্ধারের ঘটনা এটাই প্রথম।
এদিকে ৩৪ নম্বর মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গুলশান ২-এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/বি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, শিসা, গাঁ’জা ও এএমবি (আজিজ মোহাম্মদ ভাই) এর নামাঙ্কিত ১৬শ’ ক্যাসিনো ঘুঁটি উদ্ধার করা হয়। ৩৫ নম্বর মামলায় আসামি করা হয়েছে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাতিজা ওমর মোহাম্মদকে।
মামলায় তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। এ মামলায় ১১/এ বাড়ির বিভিন্ন ফ্ল্যাটে মা’দক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়। মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গুলশান জোনের পরিদর্শক এসএম শামসুল কবির বাদী হয়ে একটি মামলা এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করেন।
রোববার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ ও বি নম্বর আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
এ অভিযানে ভবনের টপফ্লোরে একটি মিনি বারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখান থেকে অ’বৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি, ৪ কেজি শিসা (২ প্যাকেট) ও সেবনের সরঞ্জাম, ৩৮২ বোতল বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ, ২শ’ গ্রাম গাঁ’জা ও ২৪ ক্যান বিয়ার সিজ করা হয়। এছাড়াও ওই ভবনের ৩য় তলায় আজিজের ছোট ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের ছেলে ওমর মোহাম্মদের বাসা থেকে ১১ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব স্থ’গিত:
ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব স্থ’গিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে একটি চিঠি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।
একই চিঠিতে শাহেদুল হক নামে আরও এক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থ’গিত ও হিসাবের সব ধরনের তথ্য তলব করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে এসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
চিঠিতে বলা হয়, ওইসব ব্যক্তির নামে বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব অতীতে বা বর্তমানে থাকলে সেগুলোর যাবতীয় কাগজপত্রসহ হিসাব খোলার ফর্ম, কেওয়াইসি, শুরু থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবগুলোতে এখন থেকে কোনো লেনদেন করা যাবে না। মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী আগামী ৩০ দিন হিসাবগুলো স্থ’গিত থাকবে। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিএফআইইউ এর মেয়াদ আরও বাড়াতে পারবে।