ফিচার ডেস্ক:
ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস আজ। ৩৫ বছর আগের আজকের দিনে নিজের ২ দেহরক্ষীর গুলিতে প্রা’ণ হারান বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগ্রামী নেতা মতিলাল নেহেরুর নাতনি এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কন্যা ছিলেন ইন্দিরা। রাজনৈতিক পরিমন্ডলেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। নিজ দেশ তো বটেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। অনেকেই বলে থাকেন, বিচক্ষণতায় ইন্দিরা তাঁর বাবা নেহরু থেকেও এগিয়ে ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন।
১৯৬৬ সালের জানুয়ারি থেকে ৭৭’র মার্চ পর্যন্ত টানা ১০ বছর প্রিয়দর্শিনী ইন্দিরা ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, প্রখর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযু’দ্ধে অবদানের জন্য তিনি এ দেশের মানুষের কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর দূরদর্শিতা, কর্মপ্রচেষ্টা এবং মানবীয় অনুভূতি আমাদের মহান মুক্তিযু’দ্ধে ব্যাপক গতির সঞ্চার করেছিল। দীর্ঘ ৯ মাস বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সফল করতে অর্থ, অ’স্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনি সাহায্য করেছিলেন। নিজেদের দেশে যথেষ্ট সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি ১ কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ও’ষুধপথ্যসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহে তাঁর চেষ্টার কমতি ছিল না। শরণার্থীদের সেবায় ইন্দিরার অবদানকে যীশু খ্রিস্টের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মাদার তেরেসা।
পাকিস্থানি বাহিনীর গণহ’ত্যা বন্ধ করা, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় এবং পাকিস্থানের কারা’গার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির লক্ষ্যে বিশ্বজনমত গঠনে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। যু’দ্ধকালীন সময়ে তিনি বিশ্ব মিডিয়ায় কী বক্তব্য দিচ্ছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
পূর্ব পাকিস্থানের মানুষের করা যু’দ্ধকে অধিকাংশ দেশই পাকিস্থানের গৃহযু’দ্ধ হিসেবে অভিহিত করতে চেয়েছে। যু’দ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও রাষ্ট্রনেতারা একে সেভাবেই বিশ্লেষণ করছিলেন। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী তাঁর বক্তব্যে পূর্ব পাকিস্থানের পরিবর্তে পূর্ব বাংলা নামটি উল্লেখ করতেন।
২৫ মার্চ ঢাকায় পাকিস্থানি সেনা বাহিনীর চালানো গণহ’ত্যার পর ২৭ মার্চ ভারতের লোকসভায় ভাষণ দিয়ে করণীয় তুলে ধরেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ৩১ মার্চ বাংলাদেশকে মুক্তিযু’দ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব তাঁর প্রচেষ্টাতেই ভারতের লোকসভায় অনুমোদন পায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি ইন্দিরা গান্ধীর জন্য নিঃসন্দেহে ঝুঁ’কিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত ছিল। বিশেষ করে পাকিস্থান এবং তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে যু’দ্ধে জড়িয়ে শ’ঙ্কাও ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপ ও চীনের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ইন্দিরা অ-বিচলভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।
১৯৪৯ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, যেখানে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার হুম’কির মুখে পড়বে বা যেখানে আগ্রা’সন হবে, সেখানে আমরা নিরপেক্ষ থাকতে পারি না, আমরা নিরপেক্ষ থাকব না।
বাংলাদেশের মুক্তিযু’দ্ধে সমর্থন দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী সেই ধারাই অনুসরণ করেছিলেন। বলা চলে, বাবার আদেশ বাস্তবায়ন করেছিলেন ইন্দিরা।
1.5K