সাক্ষাৎকার: ফেনীর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান জয়নাল হাজারী, তবে…

0

সময় এখন ডেস্ক:

ফেনীর এক সময়ের বহুল আলোচিত-সমালোচিত আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারী দীর্ঘ বিরতির পর দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। তিনি রাজনীতি ছেড়েই দিয়েছিলেন। তাহলে আবার কেন তিনি ফিরে এলেন? আওয়ামী রাজনীতিতে তার এখন প্রয়োজনীয়তা কী?

এই প্রশ্নের জবাবে জয়নাল হাজারী নিজেই দিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে। তিনি বলেছেন, আমার এখন আওয়ামী রাজনীতিতে কিছু দেয়ার নেই। কোনো কর্মসূচি নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। শুধু মাত্র নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে আদেশ দেবেন সেটা পালন করব। এর বাইরে কিছু করার নেই।

জয়নাল হাজারী ফেনী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সংসদ সদস্য ছিলেন ৩ বার। ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ফেনীর মাস্টার পাড়ায় তার বাড়িতে অভিযান হয়। তখন তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে ভারতে চলে যান।

২০০৪ সালে তিনি আত্ম’গোপনে থাকা অবস্থায়ই আওয়ামী লীগ থেকে বহি’ষ্কৃত হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে আসেন। এরপর আদালতে আত্ম’সমর্পণের পর কিছুদিন কারাগা’রে থেকে জামিনে ছাড়া পান। কিন্তু তিনি আর রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হননি।

তিনি নিজেই জানিয়েছেন এখন তিনি আর ফেনী যান না। ঢাকাতেই থাকেন। তারপরও কেন আবার উপদেষ্টার পদ নিলেন? জয়নাল হাজারী বলেন, আমি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য কারো কাছে বলিনি বা ইচ্ছাও প্রকাশ করিনি। নেত্রী বলেছিলেন এখন চুপচাপ থাকেন। এতদিন চুপচাপ ছিলাম। নেত্রী বলেছেন এখন আবার আসেন। আবার এসে গেলাম।

উপদেষ্টার দায়িত্ব কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমনিতে উপদেষ্টার দায়িত্ব উপদেশ দেয়া। কিন্তু এই উপদেশ কে শোনে! এটা একটি অলঙ্কারিক পদ। কোনো দায় দায়িত্ব নেই। যারা নির্যা’তিত, যারা মুক্তিযো’দ্ধা, যাদের অবদান আছে তাদের এই পদ দেয়া দিয়ে সম্মানিত করা হয়। আমাকেও নেত্রী দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের নবতম সদস্য জয়নাল হাজারীর ওপর বিরো’ধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নিপী’ড়নের অভিযোগ আছে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল বিএনপির সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। যদিও স্থানীয় মানুষজন এসবকে বিএনপির অপ’প্রচার হিসেবেই দেখেন। ফেনীতে জয়নাল হাজারী অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি ফেনীকে বিএনপির প্রভা’বমুক্ত রাখতে সক্ষম হন। যার কারনে তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তিনি ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন সে সময়, যা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়।

তবে হাজারীর দাবি, স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। আমার প্রধান শ’ত্রু জামায়াত-শিবির। তাদের সঙ্গে ল’ড়াই করে আমাকে বাঁচতে হয়েছে। তারা আমার নামে অপ’প্রচার করেছে। এর বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই। যারা আমাকে বিত’র্কিত বলে তারাই বলতে পারবে কেন বলে।

জয়নাল হাজারী মনে করেন, ফেনীর সব কিছু এখন ন’ষ্ট হয়ে গেছে। খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু তার এখন আর তেমন কোনো শক্তি নেই যে তিনি ফেনী ফিরে গিয়ে সব কিছু ঠিক করে ফেলবেন। তিনি ফেনীতে ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি। তবে যদি শেখ হাসিনা বলেন তাহলে তিনি ফিরে যাবেন, সক্রিয় হবেন। এমনকি তিনি চাইলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনও করবেন।

নির্বাচন করলে আপনি কি ভোট পাবেন? আপনার কি জনপ্রিয়তা আছে? এর জবাবে হাজারী বলেন, না আমার এখন কোনো জনপ্রিয়তা বলতে কিছু নেই। আমার জনপ্রিয়তা শূণ্যের কোঠায় চলে গেছে। আমার মনে হয় আমি একটি ভোটও পাব না। আমার শরীরের অবস্থাও ভালো না যে আবার মাঠে নামব।

তারপও যদি মনোনয়ন পান, তাহলে কী হবে? হাজারী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে জনপ্রিয়তা লাগবে না। আওয়ামী লীগের লোকেরাই ভোট দিয়ে দেবে।

এক সময়ে ফেনীর একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে পরিচিত জয়নাল হাজারী এখন নিজের সিদ্ধান্তে কিছুই করবেন না। তার একটাই কথা, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!