সময় এখন ডেস্ক:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর বিরু’দ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া তার গাড়িচালকের বিরু’দ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ধীমান চন্দ্র মণ্ডল এই আদেশ দেন।
এদিন মঞ্জু ও সাজ্জাদকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেন ওয়ারী থানার এসআই হারুন-অর-রশীদ। অ’স্ত্র মামলায় মঞ্জুকে ৭ দিন এবং মা’দক মামলায় ২ জনকে ৭ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড না মঞ্জুর করে জামিনের আবেদন করেন।
দুই পক্ষের বক্তব্য শেষে বিচারক মঞ্জুকে ২ মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন এবং সাজ্জাদের বিরু’দ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জু ওয়ারি থানা আওয়ামী লীগের একজন সদস্য। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গত কমিটিতেও সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি।
টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদা’বাজি, অ’বৈধ দখ’লদারির পাশাপাশি মা’দকের কারবারের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। অবশ্য তিনি নিজে বরাবরই তা অ’স্বীকার করেছেন।
কাজী মো. রনি নামে একজন ব্যবসায়ী গত বুধবার ওয়ারী থানায় মঞ্জুর বিরু’দ্ধে মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ, কাউন্সিলর মঞ্জু তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং ওই টাকা না দেওয়ায় বিভিন্নভাবে হুম’কি দিয়েছেন।
এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে তার টিকাটুলির অফিস ও বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। দুই জায়গা থেকে ২টি পি’স্তল, মদ, গাঁ’জা, ইয়া’বা, ফেন’সিডিল ও যৌ’ন উত্তে’জনাবর্ধক ও’ষুধ উদ্ধার করা হয়। মঞ্জুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তার গাড়িচালক সাজ্জাদকে।
পরে র্যাব বৃহস্পতিবার রাতেই কাউন্সিলর মঞ্জুকে থানায় হস্তান্তর করে দুটি মামলা দায়ের করেন র্যাব-৩ এর নায়েব সুবেদার ইব্রাহিম হোসেন। এর মধ্যে অ’স্ত্র মামলায় কেবল মঞ্জুকে এবং মা’দক মামলায় দুজনকেই আসামি করা হয়।
মঞ্জু গ্রেপ্তার হওয়ায় টিকাটুলির রাজধানী মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা আজ সারাদিন ধরে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করেছে এমন সংবাদ পাওয়ার পর বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে ব্যবসায়ীরা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ‘চাঁদা’বাজ মঞ্জু নিপা’ত যাক, রাজধানী মার্কেট মুক্তি পাক। চাঁদা’বাজ মঞ্জুর বিচার চাই ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।
অফিসের পর তার হাটখোলা রোডের বাসায়ও অভিযান চালায় র্যাব। মঞ্জু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের নেতা এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। অভিযানে মঞ্জুর গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযান শেষে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, মঞ্জুর স্ত্রী ও সন্তানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। অ’বৈধভাবে আয় করা কোটি কোটি টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে স্ত্রী-সন্তানের কাছে পাঠাতেন।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এভাবে টাকা পাঠাতে পারেন কিনা- বিষয়টি আইনগতভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করবে।
তার আয়ের উৎস চাঁদা’বাজি, দখ’লবাজি এবং সন্ত্রা’সী কর্মকাণ্ড। এসব অভিযোগে তার বিরু’দ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে। এর বাইরে তার কার্যালয় থেকে মা’দক ও অ’স্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হবে। তিনি মা’দক সেবন ও কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত।
ক্যাসিনোবিরো’ধী এবং শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে মঞ্জু ওয়ারী থানায় একটি চাঁদা’বাজি মামলার আসামি।
মামলাটি বুধবার রাতে করা হয়েছে। ওই মামলার সত্যতা যাচাই করে মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার অফিস থেকে অ’স্ত্র, মা’দক এবং বিভিন্ন নি’ষিদ্ধ দ্রব্য পাওয়া গেছে। অ’স্ত্রটি তার শরীর তল্লা’শি করে পাওয়া গেছে।
মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে অ’বৈধ চাঁদা’বাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছিলেন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। এরপরই অভিযান চালিয়ে তার কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কাউন্সিলর মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে টিকাটুলির ‘রাজধানী মার্কেটে’র ব্যবসায়ীদের জি’ম্মি করে রেখেছেন। তার চাঁদা’বাজিতে অতি’ষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সবাই।
রাজধানী মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, মঞ্জু নিজেকে রাজধানী মার্কেটের অঘোষিত সভাপতি দাবি করতেন। কেউ দোকান ভাড়া নিলে, বিক্রি করলে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতেন তিনি।
কিছুদিন আগে এসি লাগানোর কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজই করেননি। প্রায় ৯ বছর ধরে তার চাঁদা’বাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
মঞ্জুর শ্যালিকা সুমি আক্তার বলেন, মঞ্জুর স্ত্রী ও ৩ সন্তান ২০ বছর ধরে আমেরিকায় থাকে। মঞ্জু নিজেও মার্কিন নাগরিক। টিকাটুলির হাটখোলা রোডের একটি বাড়ির ৩ তলা এবং ৪ তলায় তার ২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি ৪ তলার ফ্ল্যাটে একাই থাকেন।
র্যাব জানায়, মঞ্জুর বিরু’দ্ধে এলাকাবাসী মুখ খুলত না। এ কারণে তার বিরু’দ্ধে অভিযোগ থাকলেও সাক্ষীর অভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
এ বিষয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফীউল্লাহ বুলবুল বলেন, মঞ্জুর বিরু’দ্ধে অভিযোগ থাকলে ভয়ে কেউ তার বিরু’দ্ধে সাক্ষ্য দিতেন না। এখন মোক্ষম সময়। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এখন অনেকেই মুখ খুলছেন। এখন জনগণ আশ্বস্ত হয়েছেন এবং সাহস পেয়েছেন। তারা আইনি কার্যক্রমে সহযোগিতা করবেন।