মুক্তমঞ্চ ডেস্ক:
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার (১৫) মা’রা গেছে দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে। ছাত্রটিকে ওই অবস্থায় রেখে আপনারা মহা আনন্দে কনসার্ট চালিয়ে গেলেন। মহা আনন্দে নিজেদের ঢাকঢোল বাজালেন। ছাত্রটির মৃ’ত্যুর খবরটা পর্যন্ত লম্বা সময় ধরে গোপন রেখেছেন!
আবরারের ডেডবডির উপর আপনারা অনুষ্ঠান করলেন, কনসার্ট চালিয়ে গেলেন! আপনারা হয়ত দেশ সেরা পত্রিকা হতে পারেন। তবে আপনারা এখনও মানুষ হতে পারেননি। আর দেশের সুশীল সমাজ, যারা নিয়মিত প্রথম আলো থেকে মোটা মোটা খাম পান, আপনারা আজ সবাই চুপ। এখানে আজ ছাত্রলীগ জড়িত থাকলে আপনাদের বিপ্লব আকাশ ছুঁতো।
যদি এই ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন জড়িত থাকলে আপনারা ৩ পাতা জুড়ে এই ঘটনা টেনে নিয়ে যেতেন। ছাত্রলীগ যুবলীগ কবে কোথায় কোন কাজ করেছে, সব কিছুর ফিরিস্তি টানতেন। আপনারা আরেকটা ছাত্র আন্দোলনের পেছনে ইন্ধন যোগাতেন। আপনাদের সেই বাতাস লেগে ফুলে উঠত পাল। আর দেশজুড়ে সরকারের পিন্ডি চট’কানো শুরু হয়ে যেত। সাথে সুশীল সমাজের হায় হায় রব! সোশ্যাল মিডিয়ায় হতো প্র’তিবাদ।
মাত্র ১৫ বছর বয়সী ছেলেটা আপনাদের অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। সে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মা’রা যায়নি। বেঁচে ছিল। আপনারা তাকে মোহম্মদপুর থেকে টেনে দীর্ঘ সময় ন’ষ্ট করে অ্যাম্বুলেন্সে করে মহাখালীতে কেন নিয়ে গেলেন? সেখানে তো দেশের নামকরা একটা হাসপাতালসহ আরও কিছু ক্লিনিকও ছিল। সেখানে না নিয়ে গিয়ে আপনারা আবরারকে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ ওই হাসপাতালে কেন নিয়ে গেলেন অতদূরে?
আবরার কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সেও কথা বলছিল। মহাখালীতে নিতে নিতেই সে চলে গেল। তখন দুপুর ২টা। তখনও আপনাদের অনুষ্ঠান চলছিল। একটা ছাত্র এভাবে ম’রে গেল, এই খবর গোপন রেখে কী করে আপনারা অনুষ্ঠান চালিয়ে গেলেন? এখন আবার দেখছি আপনারা আপনাদের ফেসবুক পেজে নানান সব যুক্তি উপস্থান করছেন। এই সব যুক্তি’র কোথাও বললেন না- কেন আপনারা তাকে মহাখালীতে আপনাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালে নিয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
এছাড়া আরও কিছু প্রশ্ন আছে সাধারণ মানুষের। আপনারা বলছেন, আবরারের মৃ’ত্যুর খবর আপনারা জানতেন না; জানলে অনুষ্ঠান চালিয়ে যেতেন না। আসলেই! একটা ছাত্র আপনাদের অনুষ্ঠানে এসে বিদ্যুতায়িত হলো; আপনারা জানতেনও না? আপনাদের খোঁজ নেবারও প্রয়োজন পড়লো না? নাকি জেনেও এখন না জানার ভান করছেন? দুটোই তো অপরাধ।
প্রশ্ন আরও আছে। আবরার গতকাল দুপুর ২টার দিকে মা’রা গেছে। এই ঘটনা তো এমনিতেই পত্রিকায় আসার কথা। গতকাল পুরো দিন পুরো রাত চলে গেল, আপনাদের পত্রিকার কোথাও এই খবর পেলাম না কেন? আপনাদের তো অনলাইন ভার্সন আছে। সেখানে তো কোনো খবর দেখলাম না এই নিয়ে?
আজ কেন এ নিয়ে খবর করেছেন? এখন আমরা লিখছি বলে? নইলে দিব্যি চেপে যেতেন, তাই না? যাও আবার লিখছেন, পড়ে মনে হচ্ছে খুব স্বাভাবিক ঘটনা! এখানে আপনাদের কোন দায় ছিল না! কী অবাক কাণ্ড! দেখুন আপনারা ৩টা অ’ন্যায় করেছেন। আবরার বিদ্যুতায়িত হবার পর তাকে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে আপনারা অ’ন্যায় করেছেন। ছাত্রটির মৃ’ত্যুর খবর গোপন করে আপনারা অ’ন্যায় করেছেন। তার ডেডবডির ওপর অনুষ্ঠান চালিয়ে গিয়ে আপনারা অ’ন্যায় করেছেন।
আপনারা ভুল করেছেন কিংবা অ’ন্যায় করেছেন; এখন এটার হয়ে সাফাই গাইছেন কেন? আপনারা ভুল বা অ’ন্যায় করে স্বীকার করেন না, ক্ষমা চান না সহজে; চাপে পড়ে সিধা হন। পরে স্বীকার করতে বা’ধ্য হন। এজন্যই শ্রদ্ধেয় আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী আপনাদের সম্পাদকের নাম দিয়েছিলেন- তওবা সম্পাদক।
আজ মাথা কুটলেও আবরারকে ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আপনাদের মত কর্পোরেট মাফিয়াদের যদি একটা বিচার করতে পারে দেশের আইন, ভবিষ্যতে আর কোনো আবরারকে হারাতে হবে না আমাদের।
লেখক: ক্বারী ইকরামুল্লাহ মেহেদী
পরিচিতি: শিক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মী
পেকুয়া, কক্সবাজার
3.3K