আইন আদালত ডেস্ক:
ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হ’ত্যার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেননি হাইকোর্টে।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে জামিন দেননি হাইকোর্ট, তবে তার মামলা ৪০ কার্যদিবসে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আর রাষ্ট্রপক্ষের কারণে আগামী ৪০ কার্যদিবসের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি না হলে তখন তার জামিন আবেদন বিবেচনায় নেবেন আদালত। বিচারিক (নিম্ন) আদালতকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী রানা কাওসার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সরওয়ার হোসেন বাপ্পী। মূল মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অ-সম্মানজনক’ কথা বলায় ও তার জবানব’ন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে বাদী হয়ে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
বাদীর জবানব’ন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরু’দ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পরে ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ১৭ জুন তাকে ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিনই ফেনী সোনগাজী থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম মোয়াজ্জেমকে আদালতে হাজির করে। পরে জামিন আবেদন করলে আবেদন না’কচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এরপর গত ১৭ জুলাই সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস-সামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় তার বিরু’দ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এর আগে হাইকোর্টে করা জামিন আবেদন ৯ জুলাই হাইকোর্ট বেঞ্চে উত্থাপিত হয়নি- মর্মে খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াত।
পরে ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট তার জামিন আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলার বিরু’দ্ধে শ্লী’লতাহা-নির অভিযোগে মামলা করেন ভিক্টিম নুসরাতের মা। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যৌ’ন হয়রা’নির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রা’নির শি’কার হতে হয় নুসরাতকে। ‘নিয়ম না মেনে’ জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় ২ জন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগমুহূর্তে বান্ধবীকে মারধ’রের কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরু’দ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দু’র্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অ-স্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ওইদিন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃ’ত্যু হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যা’তন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ নুসরাত হ’ত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে (১৬ আসামি) মৃ’ত্যুদ’ণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা দ’ণ্ডেও দণ্ডিত করেন।
181