সময় এখন ডেস্ক:
অ’নিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে পড়ায় অবশেষে লোপাটের উদ্দেশ্যে নিজের কাছে রেখে দেয়া প্রায় ৩২ কোটি টাকা ফেরত দিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মো. আফজাল।
গত ২৩ অক্টোবর সোনালী ব্যাংক পাবলিক সার্ভিস কমিশন শাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে রাজস্ব কোষাগারে এ টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইফা ডিজি সামীম আফজাল বলেন, টেলিফোনে এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। কিছু জানতে হলে অফিসে আসুন।
৩২ কোটি টাকা কেন ফেরত দিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারও বলেন, অফিসে আসুন। তখন বলব।
৩২ কোটি টাকা রাজস্ব কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমি আজই বিকেলে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছি। টাকা জমা দিয়েছেন কি না, বিষয়টি আমি আগামীকাল অফিসে গেলে জানতে পারব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই ৩২ কোটি টাকা আত্ম’সাতের উদ্দেশ্য ছিল ডিজি সাহেবের। এ কারণেই তিনি এ টাকা নিজ জি’ম্মায় রেখে দিয়েছিলেন। গত ৫ মাস আগে বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই সময় একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়।
এ কমিটি তদন্ত ও অনুসন্ধান করে ডিজির ৩২ কোটি টাকা অ’নিয়মের সন্ধান পায়। এরপর একটি অডিট কমিটি করা হয়। এ কমিটিকে ম্যানেজ করার জন্য ডিজি সাহেব বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত টাকাটা রাজস্ব কোষাগারে ফেরত দিয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে নিয়োগ লাভের পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে সামীম আফজালের বিরু’দ্ধে। তার আর্থিক অ’নিয়ম ও ক্ষমতার অপ-ব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ করে। সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সামীম আফজাল ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসেব তলব করে। এর পরই টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২৩ অক্টোবর নিজের স্বাক্ষরিত সোনালী ব্যাংকের ১৪৬০৭০৮ নং চেকের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ২২০ টাকা ফেরত দেন সামীম আফজাল। সরকারের বিশেষ নিরীক্ষা দল এ টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে এ নিরীক্ষা দল প্রেরণ করা হয়।
সিভিল অডিট বিভাগের এ নিরীক্ষা দল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ডিপিপি, বরাদ্দ ও ব্যয়, ক্যাশবই, লেজার বুক ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে ৩১ কোটি ৯৯ লাখ ১৫ হাজার ২২০ টাকার গরমিল পান। এ টাকার বিষয়ে ইফা ডিজিকে জিজ্ঞেস করে নিরীক্ষা দল। এ টাকা ৬৪ জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে বলে ইফা ডিজি দাবি করেন। তবে এর পক্ষে তিনি টাকা ছাড়ের কোনা নথি দেখাতে পারেননি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার চাপে শেষ পর্যন্ত সামীম আফজাল এ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। এ ছাড়াও ফাউন্ডেশনের কেনাকাটায় আরো বিপুল অর্থ আত্ম’সাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরু’দ্ধে।
শুধু একটি ঘটনায়ই তার ৩২ কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এ ধরনের আরো বহু প্রকল্প থেকে আরো বড় দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে তার বিরু’দ্ধে।
147