আইন আদালত ডেস্ক:
নতুন সড়ক আইনের সুযোগে আইন অমা’ন্যকারীর সঙ্গে ব্যক্তিগত খাতির করে কোনো সার্জেন্ট যদি মামলা না দেন তাহলে তার কী হবে?
সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, কোনো কর্মকর্তা যদি মামলা না দিয়ে অন্য কোনোভাবে সুবিধা নিতে চান, কেউ যদি সে অভিযোগ করেন এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমরা সার্জেন্টদের ক্যামেরা দেব। এমন ঘটনার যদি অভিযোগ থাকে আর যদি সার্জেন্টের ক্যামেরা অন না থাকে (বন্ধ থাকে), আমরা ধরে নেব সে অ’বৈধ কাজের জন্য বন্ধ রেখেছিল। তার বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর বাস্তবায়ন নিয়ে সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রশ্ন করা হলে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সচিবসহ সরকারী কর্মকর্তাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে ৯৯% যাত্রী হেলমেট পরছেন। গুটিকয়েক পরছেন না, যাদের অধিকাংশই পুলিশ ও সার্জেন্ট। এ আইনে তাদের বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না?
জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ স্বচ্ছ থাকবে। আমরা পুলিশের সবাইকে বলে দিয়েছি, ট্রাফিকের লোকজন যদি আইন অ’মান্য করে তাদের বিরু’দ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন সম্পর্কে সার্জেন্টদের মাসখানেক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, তাদের বই দেয়া হয়েছে এবং সেই বইয়ের ওপর পরীক্ষা নেয়া হবে। আইনের কোনো ধারায় যদি কাউকে সর্বোচ্চ শা’স্তি দেয়া হয়, তাহলে সে বিষয়ে শুনানির ব্যবস্থা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার বলেন, আইনটি প্রয়োগের আগে আমরা যারা যানবাহন ব্যবহার করি তাদের সচেতন করছি। বাস টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে মাইক দিয়ে আইনের বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। শ্রমিকদের জড়ো করে আইন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পত্রপত্রিকায়ও নতুন আইনের ধারা নিয়ে ফিচার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সার্জেন্ট-টিআইসহ ৮০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
আগে ডিএমপিতে পস মেশিনের (পয়েন্ট অব সেল) মাধ্যমে মামলা দিতাম, তবে সফটওয়্যার আপডেটের কারণে মেশিনে মামলা দেয়া আপাতত বন্ধ আছে। আমরা আগের নিয়মে কাগজের কেস স্লিপ বই প্রিন্ট করেছি, তা দিয়ে আপাতত মামলা দেয়া হবে। নতুন আইন অনুসারে সফটওয়্যার আপডেট হয়ে গেলে আবার পস মেশিনে ফিরে যাব।
মামলার ধারাগুলো নিয়ে তিনি বলেন, এ মামলায় নতুন কিছু বৈচিত্র্য আছে। এখানে সাজার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, এতে মানুষের মধ্যে ভয়ে হলেও আইন মানার প্রবণতা সৃষ্টি হবে। উন্নত বিশ্বের মতো আইনভ’ঙ্গের জন্য পয়েন্ট কা’টার সিস্টেম করা হয়েছে।
প্রায়ই মামলার কাগজ তোলা নিয়ে অনেককে ভো’গান্তিতে পড়তে হয়। ভো’গান্তি ঠেকাতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কি না- জানতে চাইলে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মামলা দিলে সংশ্লিষ্ট ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ে তার দায়িত্বে কাগজ দেই। অন্য কোথাও কাগজ দেই না। উনার কাছে গেলেই ভো’গান্তি ছাড়া গাড়ির কাগজপত্র পাওয়া যাবে।
আইনের ধারাগুলোতে সর্বনিম্ন টাকার পরিমাণ লেখা না থাকলেও সর্বোচ্চ শা’স্তির পরিমাণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ কীভাবে মামলা দেবে?
জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, নতুন আইন যদি কেউ প্রথমবার ভ’ঙ্গ করে তাহলে তাকে সামান্য পরিমাণ জরি’মানা করা হবে। একই সঙ্গে তাকে একটি লিফলেট দেয়া হবে যে, পরবর্তীতে এই একই অপরাধ করলে তাকে আইন অনুযায়ী পুরো জরি’মানা বা শা’স্তি ভোগ করতে হবে। প্রথম ১ সপ্তাহ নতুন আইনে কোনো মামলা হবে না। এরপর থেকে রসিদের মাধ্যমে মামলা নেয়া শুরু হবে। পস মেশিনের সার্ভার আপডেট করার পরে এ পদ্ধতিতে মামলা নেয়া শুরু হবে।
পথচারীরা জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে পার না হলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরি’মানা। এই পরিমাণটি আগে ছিল ২০০ টাকা। অথচ রাজধানীর অনেক সড়কে ওভারব্রিজ বা জেব্রা ক্রসিং নেই। সে ক্ষেত্রে কীভাবে মামলা দেয়া হবে?
জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে সব জায়গায় জেব্রা ক্রসিং নেই ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের রাস্তা পারাপারে সাহায্য করবেন।
603