জাবি শিক্ষার্থীদের রক্ষায় পুলিশের সামনে শিক্ষকদের মানবপ্রাচীর

0

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

আন্দোলনরত জাবি শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে পুলিশ ফোর্সের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল হক ভূঁইয়া জানান, আমরা ৪০ জন শিক্ষক মিলে হাত ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এই মানবপ্রাচীর তৈরী করেছি। আমরা আশ’ঙ্কা করছি যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হাম’লা হতে পারে।

বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মানবপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তিনি এ কথা জানান।

জাবি কর্তৃপক্ষের দেয়া হল ভ্যাকেন্টের নির্দেশ প্র’ত্যাখান করে উপাচার্যের অপ-সারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বুধবার বিকেল ৫টা থেকে আবারও তারা উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বাসভবন ঘেরাও করেছে। হলত্যাগের নির্দেশ অ-মান্য করে বিক্ষো’ভ মিছিল করে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এদিকে চলমান আন্দোলনে সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষকদের প্রকাশ্যে দেখা গেছে। অত্যন্ত ২০ জন শিক্ষককে আন্দোলন সমাবেশে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে ৩ জন সিনেট সদস্য রয়েছে। ফলে ক্রমেই সু-সংগঠিত হয়ে বেগমান হচ্ছে আন্দোলন।

আজ বেলা ১১টায় একটি বিক্ষো’ভ মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। এতে বিভিন্ন বিভাগের ২৫-৩০ জন শিক্ষক সংহ’তি প্রকাশ করে অংশ নেন। বিক্ষো’ভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে। পরে বিকাল ৫ টায় ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা।

সমাবেশে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, গতকাল দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর যে হাম’লা চালানো হয়েছে এবং চলমান আন্দোলন দ’মাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল খালির ঘোষণাকে আমরা প্র’ত্যাখ্যান করছি। একই সঙ্গে আবারও বিক্ষো’ভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করব।

সমাবেশ সং’হতি জানিয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাঁচানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের একচ্ছত্র আ’ধিপত্য বি’স্তারের চিন্তা বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিকশিত হতে দিন। তিনি উপাচার্যকে অনুরোধ করে বলেন, যে টুকু সম্মান আছে তা নিয়ে দয়া করে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেন।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, আমরা যে কর্ম-যজ্ঞে আছি তা আমরা বাস্তবায়ন করবো। আমরা দীর্ঘ ৩ মাস অপেক্ষা করেছি, আন্দোলন করেছি। কিন্তু উপাচার্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে চান না। উনি বলেন- জামায়াত-শিবির ষড়-যন্ত্র করছে। একজন উপাচার্য যদি মিথ্যাচার করে তবে সেই পদে বহাল থাকার অধিকার থাকে না।

সমাবেশে কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন মোজাম্মেল হক বলেন, এই আন্দোলন কোনো উপাচার্য কিংবা শিক্ষকের বিরু’দ্ধে নয়। দুর্নীতির বিরু’দ্ধে। এই উপাচার্য যদি থাকে তবে ছাত্র শিক্ষক এবং শিক্ষক শিক্ষকের মধ্যে বিশৃ’ঙ্খলা হতেই থাকবে। আমরা তাকে আর চাই না।

এদিকে দুপুর ১২টায় এক জরুরি মিটিং ডেকে বিকাল সাড়ে ৩টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্র’তিবাদে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ফলে ক্রমেই উত্ত’প্ত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি। ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণার পরও উপচার্যের পদ’ত্যাগের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

হলত্যাগের বিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, এই সময়ের পর আন্দোলনকারী, সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ কেউই হলে থাকতে পারবে না। প্রয়োজন হলে প্রশাসন আবাসিক হলে পুলিশ তল্লাশি চালাবে।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ‘হল ভ্যাকেন্ট’ এর তীব্র বিরো’ধিতা করেছেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন উপাচার্য অপ-সারিত না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

এদিকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে শতাধিক পুলিশ। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছেন আইন শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ভিসির বাসভবনের ভেতরে অবস্থান করছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা।

উপাচার্যের বাসার সামনে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী ৩শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে দেড়শ’ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আর বাইরে রিজার্ভ রয়েছে আরো দেড়শ’।

তিনি জানান, আমাদের আপতত এখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!