সময় এখন ডেস্ক:
বীর মুক্তিযো’দ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃ’ত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শোকবার্তায় কাদের মঈন উদ্দীন খান বাদলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মা’রা যান।
মৃ’ত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন এমপি বাদল। সে কথাই তিনি জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমকে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নেবে কি না- এমন এক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল সে সময়। সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই মঈন উদ্দীন খান বাদলের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন গণমাধ্যমটির সাংবাদিক।
এ সময় রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে কতটুকু সফল বলে মনে করেন, জবাবে বাদল বলেছিলেন, মুক্তিযু’দ্ধের সময় ভারতের জেনারেল সুজন সিং উবানের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম আমরা। উনি হেডকোয়ার্টার করেছিলেন রাঙামাটি। আমি আর প্রয়াত ছাত্রনেতা এসএম ইউসুফ তার কাছে গেলাম একদিন। তিনি বললেন, বাচ্চা ‘চা পিয়ো’ (চা খাও)।
চা খেতে খেতে মেজর জেনারেল (অব.) সুজন সিং উবান বলছিলেন, দেখো নিজেকে এমনভাবে তৈরি করবে যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে মৃ’ত্যুকে আলিঙ্গন করার মানসিকতা থাকে। তবেই তুমি একজন ভালো যো’দ্ধা হবে। তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তোমার মৃ’ত্যুতে কেউ চোখের পানি ফেলবে না। কেউ শোকবার্তা দেবে না। এ রকম নীরবে যদি ম’রে যেতে পার, তবেই তুমি একজন আসল যো’দ্ধা।
সুজনের সেই নিদের্শনাটি তার কানে এখনও বাজে বলে জানিয়েছিলেন এমপি বাদল।
তিনি বলেছিলেন, সুজন সিং উবানের কথাটি আমার হৃদয়ে দাগ কে’টেছে। মুক্তিযু’দ্ধকালীন সেই মানসিকতা নিয়েই যু’দ্ধ করেছি। জয়লাভ করেছি। সেই থেকেই আমি মৃ’ত্যুর জন্য প্রস্তুত। খালি হাতে এসেছিলাম। খালি হাতেই যাব।
উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর থেকে ভারতে প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠির তত্ত্বাবধানে ছিলেন মঈন উদ্দীন খান বাদল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃ’ত্যুবরণ করেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে তার ভাই মনির উদ্দীন খান বলেন, মরহুমের ডেডবডি দ্রুত বাংলাদেশে আনা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া মঈন উদ্দীন খান বাদল বোয়ালখালী উপজেলা জাসদের সভাপতি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসনের ৩ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। সংসদেও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিল তার। প্রতিটি সংসদ অধিবেশনেই সপ্রতিভ ক্ষু’রধার বক্তব্য রাখতেন তিনি।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল একাত্তরের রণাঙ্গনে জীবন’বাজি রেখে ল’ড়েছেন দেশমাতৃকার জন্য। বাঙালিদের ওপর আক্র’মণের জন্য পাকিস্থান থেকে আনা অ’স্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরো’ধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন এ বীর মুক্তিযো’দ্ধা।
মুক্তিযু’দ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও বাদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।