বীর মুক্তিযো’দ্ধা মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃ’ত্যুতে জাপা চেয়ারম্যানের শোক

0

সময় এখন ডেস্ক:

জাসদ নেতা, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য এবং বরেণ্য রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযো’দ্ধা মঈন উদ্দীন খান বাদল এমপির মৃ’ত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং বিরো’ধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।

আজ এক শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত মঈন উদ্দীন খান বাদলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। পাশাপাশি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

জিএম কাদের বলেন, মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃ’ত্যুতে দেশের রাজনীতিতে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা সহসাই পূরণ হওয়ার নয়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রয়াত মঈন উদ্দীন খান বাদল ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মহান মুক্তিযু’দ্ধে তার অবদান বাঙালি জাতির ইতিহাসে চির অম্লান হয়ে থাকবে। দেশ ও মানুষের প্রতি এই জাসদ নেতার মমত্ববোধ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মা’রা যান।

মৃ’ত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন এমপি বাদল। সে কথাই তিনি জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমকে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নেবে কি না- এমন এক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল সে সময়। সেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই মঈন উদ্দীন খান বাদলের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন গণমাধ্যমটির সাংবাদিক।

এ সময় রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে কতটুকু সফল বলে মনে করেন, জবাবে বাদল বলেছিলেন, মুক্তিযু’দ্ধের সময় ভারতের জেনারেল সুজন সিং উবানের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম আমরা। উনি হেডকোয়ার্টার করেছিলেন রাঙামাটি। আমি আর প্রয়াত ছাত্রনেতা এসএম ইউসুফ তার কাছে গেলাম একদিন। তিনি বললেন, বাচ্চা ‘চা পিয়ো’ (চা খাও)।

চা খেতে খেতে মেজর জেনারেল (অব.) সুজন সিং উবান বলছিলেন, দেখো নিজেকে এমনভাবে তৈরি করবে যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে মৃ’ত্যুকে আলিঙ্গন করার মানসিকতা থাকে। তবেই তুমি একজন ভালো যো’দ্ধা হবে। তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তোমার মৃ’ত্যুতে কেউ চোখের পানি ফেলবে না। কেউ শোকবার্তা দেবে না। এ রকম নীরবে যদি ম’রে যেতে পার, তবেই তুমি একজন আসল যো’দ্ধা।

সুজনের সেই নিদের্শনাটি তার কানে এখনও বাজে বলে জানিয়েছিলেন এমপি বাদল।

তিনি বলেছিলেন, সুজন সিং উবানের কথাটি আমার হৃদয়ে দাগ কে’টেছে। মুক্তিযু’দ্ধকালীন সেই মানসিকতা নিয়েই যু’দ্ধ করেছি। জয়লাভ করেছি। সেই থেকেই আমি মৃ’ত্যুর জন্য প্রস্তুত। খালি হাতে এসেছিলাম। খালি হাতেই যাব।

উল্লেখ্য, গত ১৮ অক্টোবর থেকে ভারতে প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠির তত্ত্বাবধানে ছিলেন মঈন উদ্দীন খান বাদল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃ’ত্যুবরণ করেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করে তার ভাই মনির উদ্দীন খান বলেন, মরহুমের ডেডবডি দ্রুত বাংলাদেশে আনা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া মঈন উদ্দীন খান বাদল বোয়ালখালী উপজেলা জাসদের সভাপতি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসনের ৩ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। সংসদেও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিল তার। প্রতিটি সংসদ অধিবেশনেই সপ্রতিভ ক্ষু’রধার বক্তব্য রাখতেন তিনি।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল একাত্তরের রণাঙ্গনে জীবন’বাজি রেখে ল’ড়েছেন দেশমাতৃকার জন্য। বাঙালিদের ওপর আক্র’মণের জন্য পাকিস্থান থেকে আনা অ’স্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরো’ধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন এ বীর মুক্তিযো’দ্ধা।

মুক্তিযু’দ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও বাদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

শেয়ার করুন !
  • 1.6K
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!