বিশেষ প্রতিবেদন:
মাইনাস করার উদ্দেশ্যেই শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১০ মাস ২৫ দিন কারাবরণের পর ১১ জুন ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা মুক্তি পান। শেখ হাসিনাকে যারা মাইনাস করতে চেয়েছিলেন, তারাই এখন রাজনীতিতে মাইনাস হয়ে যাচ্ছেন। তারাই এখন দেশে সমাজে এবং রাজনীতি মাইনাস হয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনাকে যারা মাইনাস করতে চেয়েছিলেন, তাদের অনেকেরই এখন ঠিকানা নেই। অনেকেই দেশে থাকতে পারছেন না। অনেকের নামই ইতিহাস থেকে মুছে গেছে। দেখা যাচ্ছে যে, শেখ হাসিনাকে ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে যারা মূল কুশীলব ছিল, তাদের কার কী অবস্থা:
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী: ডিজিএফআই এর সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার বারী ওয়ান ইলেভেনের পর চাকরি’চ্যুত হয়েছেন। তার পর তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। জানা যায় যে, লন্ডনে তার অবস্থান ভালো নয়। সেখানে তিনি অড জব করে তার জীবন নির্বাহ করছেন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন: শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে যারা অন্যতম কুশীলব ছিল তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ছিলেন অন্যতম। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেশ দাপটেই ছিলেন। কিন্তু এক নারী সাংবাদিককে ক-টুক্তি করার অপরাধে জেল খাটার পর এখন তিনি চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো হয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে মাঝে সক্রিয় হলেও এখন রাজনীতি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ততারও তার কোন খবর পাওয়া যায় না।
জেনারেল (অব:) আব্দুল মতিন: ওয়ান ইলেভেনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ছিলেন জেনারেল (অব:) আব্দুল মতিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব শেষ করে তিনি চট্টগ্রামে আছেন। সেখানে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে নিভৃত জীবনযাপন করছেন।
জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী: সাবেক সেনা প্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান। নীতিবান হলেও শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে তিনি নীতি জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। আর ওয়ান ইলেভেনের পর এখন তাকে দেখা যায় না। তিনিও লোকচক্ষুর অন্তরালে জীবন যাপন করেন বলে জানা যায়।
মঈন ইউ আহমেদ: যদিও মঈন ইউ আহমেদ শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে তেমন উৎসাহী ছিলেন না। কিন্তু তার সহকর্মীদের চাপে এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ থেকে তিনি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তার সম্মতির কারণেই শেখ হাসিনাকে ১৬ জুলাই ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু মঈন ইউ আহমেদ এখন নিজেই দেশে থাকতে পারেন না। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ: শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার পেছনে যদিও তার কোন ভূমিকাই ছিল না। যেহেতু তিনি তত্ত্বাবধায় সরকারের উপদেষ্টা প্রধান ছিলেন সেহেতু এই গ্রেপ্তারের দায় তিনি কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। বর্তমানে ফখরুদ্দীন আহমদও দেশে থাকেন না। তিনি বিদেশেই অবস্থান করছেন। দেশে আসার মত সৎ সাহসও তার নেই।
ড. মোহাম্মদ ইউনূস: তিনি ছিলেন মাইনাস ফর্মুলার অন্যতম নেপথ্য নায়ক। ওয়ান ইলেভেন আনার নেপথ্য কারিগর ছিলেন ড. ইউনূস। ইতিহাসের তথ্য প্রমাণে এটাই এখন বেরিয়ে আসে। ড. মোহাম্মদ ইউনূস এখন দেশের চেয়ে বিদেশেই বেশি সামাজিক ব্যবসা এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন। দেশের রাজনীতির ব্যাপারে তার কোন উৎসাহও নেই। ক’দিন আগে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়াতে দেশে এসে জামিন নিয়েছেন।
মতিউর রহমান: প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান দুই নেত্রীকে সরে যেতে হবে বলে লেখালেখি করে মূলত মাইনাস ফর্মূলার সূচনা করেছিলেন। মতিউর রহমান এখন নিস্প্রভ। পত্রিকার বাইরে অন্য কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। সম্প্রতি রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাত্র আবরারের মৃ’ত্যুর ঘটনায় তার নামে মামলা হয়েছে।
মাহফুজ আনাম: ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বর্তমানে মাহফুজ আনামের কর্মকাণ্ড তার পত্রিকার মধ্যেই সীমিত। জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়-যন্ত্র করেছেন তাদের কারোরই পরিণতি এখন উজ্জ্বল নয়। বরং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং জনমানুষের ভালোবাসা নিয়ে শেখ হাসিনাই এখন আপন মহিমায় উজ্জ্বল।
বাংলাইনসাইডার
10.7K