প্রবাস ডেস্ক:
সৌদি আরবে নির্যা’তিত গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে দেশে ফেরাতে ট্রাভেল এজেন্সি ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ এর মাধ্যমে সৌদি নিয়োগদাতাকে বিমানের টিকিটসহ ২২ হাজার রিয়াল (প্রায় ৫ লাখ টাকা) দেয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে অনুরোধ করেছে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল লিখেছে- ২২ হাজার সৌদি রিয়াল সুমির নিয়োগকর্তাকে (কফিল) দিলে তার কাছ থেকে ছাড়া পাবেন সুমি। এ ছাড়া তার নিয়োগকর্তা তাকে ছাড়তে অ-পারগতা প্রকাশ করেছেন।
সৌদি নিয়োগকর্তার দাবি, সুমিকে সৌদি নিতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে, যা তিনি সেবার মাধ্যমে শোধ করেননি। এখন তাকে নিতে হলে সেই ক্ষ’তিপূরণ দিয়েই কিনে নিতে হবে।
অর্থাৎ সুমিকে নিয়ে যাওয়া ট্রাভেল এজেন্সি রূপসী বাংলা ওভারসিজের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে দিলেই তাকে ছাড়বেন সৌদির সেই কফিল।
চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২২ হাজার সৌদি রিয়াল কফিলকে দিলে তার কাছ থেকে ফাইনাল এক্সিট গ্রহণ করা যাবে। এর পরই টিকিট কে’টে সুমিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে। আর এসব ব্যয় রূপসী বাংলা ওভারসিজকেই বহন করতে হবে।
সুমি আক্তার বর্তমানে নাজরান পুলিশের তত্ত্বাবধানে নাজরান শহরের একটি সেফহোমে অবস্থান করছেন। তবে কফিলের অনুমোদনসংক্রান্ত সৌদি আইনি জটিলতায় তাকে দেশে ফেরানো যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ওপর অ-মানুষিক নির্যা’তনের কথা বলে সুমি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরো’ধ জানান।
ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, ওরা আমারে মা’ইরা ফা’লাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। আর কিছুদিন থাকলে আমি ম’রে যাব।’
সে ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং গত ৩ নভেম্বর এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত।
এসব সংবাদ দেখার পর সুমি আক্তারকে ফেরাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। পরে সৌদি আরবে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারা তার (সুমি) সঙ্গে কথা বলেন। এর পরই সুমি আক্তারকে তার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে সেখানকার পুলিশ।
সুমি আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের স্ত্রী। ভিডিওতে স্ত্রীর এমন আকুতির বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সৌদিতে যাওয়ার পর পরই তার ওপর নানাভাবে নির্যা’তন চলে। আমার সঙ্গে মাঝে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এর পর যখন আমার সঙ্গে কথা হয়, তখনই সুমি বাড়ি আসতে চায়। সে আর সৌদিতে থাকতে চায় না।
তিনি বলেন, আমি গত ১১ অক্টোবর পল্টন থানায় ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। এ ছাড়া ন্যায়বিচারের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান রপ্তানি ব্যুরোর মহাপরিচালকের দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন পঞ্চগড় জেলার বোদা সদর থানার রফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমি আক্তার।
এর পর গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি অ্যারিবিয়ান এয়ারলাইনস (এসভি) ৮০৫ যোগে সৌদি যান সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধ’র, যৌ’ন হয়রা’নিসহ নানা নির্যা’তন।
দেখুন ফেসবুকে ভাইরাল সৌদিতে নির্যা’তিতা সুমির অনুরোধ-