ফিচার ডেস্ক:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স ৭০ বছর। একটি রাজনৈতিক দলের এত লম্বা সময় ধরে অস্তিত্ব টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় থাকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাংলাদেশের মতো ৩য় বিশ্বের কোনো দেশে ৭০ বছর সমান জনপ্রিয় থাকা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অবশ্যই ঈর্ষণীয় ব্যাপার।
আওয়ামী লীগের আজকের যে অবস্থান, এটি ৭০ বছরের ইতিহাস নয়। আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন সময় নানা প্রতি-কূলতা এবং অস্তিত্বের সং’কটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। অস্তিত্বের সং’কটের মধ্যেও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় শেষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছে এবং কঠিন পরীক্ষায় পাশ করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ ৫ বার মোটা দাগে অস্তিত্বের সং’কটে পড়েছিল এবং প্রায় বিলু’প্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
১৯৫৫ সাল: ১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ একটি সেক্যুলার রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর ফলে আওয়ামী লীগ প্রথম অস্তিত্বের সং’কটে পড়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের বিরু’দ্ধে প্রচারণা করা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ হিন্দুদের সংগঠন। পাকিস্থানকে বি’ভক্ত করার জন্যই এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরকম একটি প্রচারণা করে আওয়ামী লীগকে ভারতের এজেন্ট সংগঠন হিসেবে প্র’তিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব সং’কটে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই সম্মেলনের জের ধরেই ১৯৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাগমারি সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বি’ভক্ত হয়ে যায়। মওলানা ভাসানি আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু আওয়ামী লীগ অস্তিত্বের সং’কট কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে।
১৯৫৮ সাল: আওয়ামী লীগ ২য় বার অস্তিত্বের সং’কটে পড়ে ১৯৫৮ সালে যখন সামরিক অভ্যু’ত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হ’টিয়ে দেওয়া হয়। জেনারেল ইস্কান্দার মির্জার সংবিধান বাতিল, কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা বাতিল এবং রাজনৈতিক সমস্ত কর্মকাণ্ড নি’ষিদ্ধ করে। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অসংখ্য নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব নেতার গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগ প্রকৃত অর্থেই অস্তিত্বের সং’কটে পড়ে যায়। এ সময় আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। তিনি আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠক এবং নানা রকম আলাপ আলোচনাসহ নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করা এবং দল পরিচালনার জন্য অর্থ যোগানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের।
১৯৭৫ সাল: আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট। জাতির পিতাকে সপরিবারে হ’ত্যার পর কার্যত আওয়ামী লীগ বি’লীন হয়ে যাওয়ার সং’কটে পড়েছিল। ৭৫ এর পরে ৮১ সালে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত মূলতঃ দল ছিল শতভাগ দ্বিধাবি’ভক্ত। এই সময় বি’ভক্ত আওয়ামী লীগের ৩টি গ্রুপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এগুলো হলো- আওয়ামী লীগ মিজান গ্রুপ, আওয়ামী লীগ মালেক গ্রুপ, আওয়ামী লীগ পল্টু গ্রুপ। তারপর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার পর এই দ্বিধাবি’ভক্তি কাটিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করেন এবং আওয়ামী লীগকে আস্তে আস্তে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যান। মনে করা হয়, ৭৫ এর ১৫ই আগস্টই ছিল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা।
২০০১ সাল: ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র সং’কট। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারণেই আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে আবির্ভুত হয়। দল গুছিয়ে নেয়া, কর্ম পরিকল্পনা, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোভাব জানা থেকে শুরু করে সূচারু পদক্ষেপ আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখে আবারও।
২০০৭ সাল: ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ আবার অস্তিত্বের সং’কটে পড়েছিল। এই অস্তিত্বের সং’কট তৈরি করেছিলেন আওয়ামী লীগেরই কিছু সংস্কারপন্থী নেতারা। মাইনাস ফর্মূলার মাধ্যমে কার্যত তারা আওয়ামী লীগকে অস্তিত্ব’হীন করার ষড়-যন্ত্রে মেতেছিলেন। অন্যান্যবারের মত এবারও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা, নেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অবিচল আস্থা এবং দলের জন্য নৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কালের গর্ভে বি’লীন হয়ে যায়নি। বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরও শক্তিশালী অবস্থায় উন্নীত হয়।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখ যায়, আওয়ামী লীগ যতবার অস্তিত্বের সং’কটে পড়েছে ততবার আওয়ামী লীগ আরও সঙ্ঘ’বদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। এটাই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতির বৈচিত্র্য।
2.7K