বিশেষ প্রতিবেদন:
শেখ হাসিনার পুনরুথ্থান দিবস বলা যেতে পারে ১১ জুনকে। এদিন কারা মুক্তির মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর পুনর্জন্ম হয়েছিল। বাংলাদেশ পেয়েছে এক নতুন শেখ হাসিনাকে। যিনি রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পুনর্জন্ম শুধু ১১ জুন না, ২০০৪ সালের ১১ আগষ্টকেও মনে করা হয় তাঁর রাজনীতির পুনর্জন্ম হয়েছে। কিন্তু সে দিনটা ছিল তাঁকে হ’ত্যাচেষ্টার। আর ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনে যে মাইনাস ফর্মুলা ছিল, তা-ও ছিল তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হ’ত্যা করার প্রচেষ্টা। ২০০৪ সালের গ্রেনেড হাম’লায় যেমন তাঁকে শারীরিকভাবে হ’ত্যা করা সম্ভব হয়নি, ঠিক তেমনি ওয়ান ইলেভেনে তাঁকে কারাগা’রে নিয়েও রাজনৈতিকভাবে হ’ত্যাচেষ্টা সফল হয়নি।
কেন শেখ হাসিনার বিরু’দ্ধে ষড়-যন্ত্রকারীরা বারবার ব্যর্থ হয়? কেন তিনি প্র’তিকূল পরিস্থিতি সামলে আরো উজ্জ্বল ও ভাস্কর হতে পারেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, শেখ হাসিনা ৫টি কাজ কখনই করেন না। এ কারণেই রাজনৈতিকভাবে প্র’তিপক্ষরা কখনো পরাজিত করতে পারে না। বারবার তিনি বিজয়ীর বেশেই ফিরে আসেন। ১১ জুন হলো রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার আরেজকটি বিজয় দিবস। আসুন দেখা যাক কোন কাজগুলো সে কখনোই করেন না-
আর্থিক অ’নিয়ম বা দুর্নীতি: শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং তিনি ৪ বারের প্রধানমন্ত্রী। কখনোই তিনি কোন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেটা করে- মনোনয়ন বাণিজ্য, পদ পদবী বিতরণের মতো কর্মে বিপুল অর্থ দলীয় সভাপতির ফাণ্ডে জমা পড়ে; যেটা অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যেই দেখা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ ৩৮ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কখনই নিজেকে কোন আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেননি। ওয়ান ইলেভেনের সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন তাঁকে যে কোনও মূল্যে অপরাধী বানানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করেছিল। তখন তাঁর দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে নিজেরাই অবাক হয়েছে। কারাগা’রে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে বিগ্রেডিয়ার আমিন এবং ব্রিগ্রেডিয়ার বারীরা দেখা করেছিলেন, তখন তারা এই কথাটি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, আর্থিক ব্যাপারে আপনি সম্পূর্ণ ক্লিন। এজন্যই শেখ হাসিনা বারবার বিপদের মুখ থেকে ফিরে আসতে পারেন। এজন্যই তিনি তাঁর রাজনৈতিক ব্যাপারে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং স্পষ্টবাদী হতে পেরেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
মিথ্যে আশ্বাস বা প্রলোভন: রাজনীতি মানেই হলো মিথ্যে আশ্বাস বা প্রলোভন দিয়ে মানুষকে ঠ’কানো- এরকম একটা ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল রয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা হলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কাউকে মিথ্যে আশ্বাস দেননি। কাউকে প্রলোভনও দেননি তিনি। মিথ্যে আশ্বাস, যেমন- একজন কেউ মনোনয়ন চাইতে গেল, তাকে মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া হলো ঠিক আছে মনোনয়ন দেওয়া হবে; কিংবা এই কাজটি করলে তোমাকে এটা দেওয়া হবে- এ ধরনের প্রলোভন বা মিথ্যে আশ্বাস শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনো দেননি। কেউ মনোনয়ন পেতে চাইলে শেখ হাসিনা হয়তো তাকে বলেন, ঠিক আছে দেখা যাবে, কাজ করো। কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাকে মনোনয়ন দেন না বা কোনো একটি পদ পদবীর আশ্বাস দিয়ে তাকে দেন না- এরকম ঘটনা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে নেই। এটা তাঁর রাজনৈতিক অনুগামী সকলেই স্বীকার করেন।
আদর্শের ব্যাপারে ছাড় দেন না: শেখ হাসিনা কখনো আদর্শের ব্যাপারে ছাড় দেন না। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে যখন দেশে ফিরেছেন, তখন থেকেই জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর হ’ত্যার সঙ্গে জড়িত দায়ী করেছেন। বিএনপিকে তিনি স্বাধীনতা বিরো’ধীদের দোসর বলেছেন। সেই সময় থেকেই তিনি ৭৫ এর ১৫ আগস্টের জন্য যু’দ্ধাপরাধী, ৭১ এর পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতা বিরো’ধীদের চিহ্নিত করেছেন। এগুলো তখন ছিল অকল্পনীয়। অনেকেই তখন বলতেন, কিছুটা আপোস না করলে রাজনীতিতে তিনি টিকে থাকতে পারবেন না। কিন্তু তাদেরকে ভ্রা’ন্ত প্রমাণ করে আদর্শের প্রশ্নে এতটুকু ছাড় না দিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। এই আজীবন ছাড় না দেওয়াটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় ইতিবাচক দিক বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
দেশের প্রশ্নে তিনি কখনো আপোস করেন না: দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার উদাহরণ এখন তৃতীয় বিশ্বে হরহামেশাই দেখা যায়। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা, এমনকি দেশের স্বার্থ যদি জলা’ঞ্জলি দিতে হয় তাতেও আপত্তি নেই। ২০০১ সালে এভাবেই বিএনপি জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এতটুকু আপোস করতে রাজি নন। গ্যাস বিক্রি করে তিনি দেশের স্বার্থ বিকিয়ে ক্ষমতায় থাকতে রাজি হননি। এটি তার তার আরেকটি ইতিবাচক দিক।
উপকারীদের তিনি কখনো ভুলে যান না: শেখ হাসিনার জন্য সামান্য যারা উপকার করেন তিনি তাদের সবসময় মনে রাখেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তিনি কাপর্ণ্য করেন না। কেউ একচুল করলে তার জন্য নিজের সবকিছু উজাড় করে দিতেও শেখ হাসিনা কার্পণ্য করেন না।
এগুলোই শেখ হাসিনার বৈশিষ্ট। এটা শুধু শেখ হাসিনার নয়। এটা বঙ্গবন্ধু পরিবারেরও বৈশিষ্ট। যে জন্যই শেখ হাসিনার জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করতে এতটুকু কার্পণ্য করেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা যে অমরত্ব পেয়েছেন, তার জন্য এই ৫টি কারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বাংলাইনসাইডার
835