সময় এখন ডেস্ক:
যুবলীগের হৃত-ইমেজ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি সংগঠনটিকে আরও গতিশীল করতে এবারের যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে থাকছে বড় চমক। যুবলীগকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে তরুণ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে আসার পাশাপাশি কোনো দুষ্ক’র্মকারীর ঠাঁই মিলবে না নতুন কমিটিতে। এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকেও শীর্ষপদে জায়গা পেতে পারেন। এমনটাই জানিয়েছে সারাবাংলা।
সংবাদ মাধ্যমটি দলীয় সূত্রের বরাতে জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে শুরু করেছেন। যারা সংগঠনের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন, ফ্রেশ ইমেজ, সম্পূর্ণ পরীক্ষিত রাজপথের সৈনিক- এমন অনেক নেতার প্রোফাইল সাংগঠনিক নেত্রীর হাতে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তিনি তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন। এর মধ্য থেকে বাছাই করে স্বচ্ছ ইমেজের ও সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন দুইজনকে বৃহৎ সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
যুবলীগের সম্মেলনে কেমন নেতৃত্ব আসছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলন মানেই নতুন মুখ। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী অঙ্গ সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে। অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে আমরা দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এখানে পরিবর্তন হবে, নতুন মুখ আসবে।
যুবলীগের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ক্লিন ইমেজের নেতারা পদ পাওয়ার আশায় অনুসারী কর্মীদের নিয়ে পার্টি অফিসে যাতায়াত করছেন। যুবলীগের শীর্ষপদে আসতে তারা ছোটখাটো শোডাউনও করছেন। এছাড়া পদপ্রত্যাশারী তাদের অনুসারীদের নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে নিয়মিত আসছেন।
২০০৯ সালে যুবলীগের সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। মূলত এরপর থেকেই শুরু ওমর ফারুক চৌধুরীর আ’ধিপত্য। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতাকর্মীর নাম আসে। এমনকি যুবলীগ চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব জ’ব্দের পাশাপাশি তাকে দেশত্যাগের ওপর নিষে’ধাজ্ঞা আসে। তাই দলের ভাবমূর্তি পরিস্কার করার পাশাপাশি সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে সম্মেলনের নির্দেশ দেন দলের হাইকমান্ড। সেই ধারাবাহিকতায় ২২ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়।
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমরা চাই যুবলীগে তরুণ, যুববান্ধব, সৎ নেতৃত্ব আসুক।
আওয়ামী লীগের বৃহত্তর সংগঠন যুবলীগে এবারের সম্মেলনে কেমন নেতৃত্ব আসছে- জানতে চাইলে সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, এবার নতুন মুখ আসবে বলে আমি আশাবাদী। এখানে কেউ প্রার্থী হন না। অনেকে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন বা নেতাদের কাছে নিজেকে তুলে ধরেন। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগের কংগ্রেসে কখনও ভোট হয়নি। স্বভাবত কংগ্রেসের ২য় অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।
এরই মধ্যে যুবলীগের শীর্ষ দুটি পদে আলোচনায় আছেন- যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও তার ছোট ভাই ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বর্তমান কমিটির সদস্য শেখ ফজলে ফাহিম (শেখ সেলিমের ছেলে), যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন ও ডা. মোখলেছুর রহমান হিরু।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন- বর্তমান কমিটির যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংগঠনিক বদিউল আলম, অপর সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন, অর্থ সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হালদার, প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন ও সহ-সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ।
এ ছাড়া যুবলীগকে ঢেলে সাজানো এবং তরুণদের নেতৃত্বে আনলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে শীর্ষ পদে জায়গা পেতে পারেন- ইসহাক আলী পান্না, বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের মধ্য থেকে যে কেউ যুবলীগের মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন।
এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং যাদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ত দলের উচ্চ গতিসম্পন্ন এমন কাউকে দলে সর্বোচ্চ নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন বলেই মনে করি। আমি দলের জন্য কাজ করছি, যতদিন বাঁচব দলের জন্য কাজ করে যাব। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মূল্যায়ন করুক না কেন আমি ওনার পাশে থেকে কাজ করব।
যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন বলেন, সম্প্রতি আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানের কারণে দলে ত্যাগী, গতিশীল, রাজপথের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই আসছে যুবলীগের শীর্ষপদে। আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যেভাবেই মূল্যায়ন করুক না কেন আমি সেই নেতৃত্ব মেনে কাজ করব। দলের পাশে ছিলাম, আগামী দিনও দলের পাশে থেকে কাজ করে যাব।
এ বিষয়ে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ধারাবাহিকতায় দলেরই স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন কাউকেই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন বলে আমি আশাবাদী। সর্বোচ্চ পদে আমাদের প্রিয় নেত্রী যাকে নিয়ে আসবেন আমরা তার সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে যুবলীগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনব।
যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। আগামীতেও কাজ করব। আমি চাই, দলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হোক।
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতা আছে, যারা ত্যাগী-নিবেদিত এরকম কাউকে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দেবেন সেই আশা করছি। সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতা রয়েছে, এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী কাজ করার সুযোগ দেবেন বলে আমি আশাবাদী।
3.3K