পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে প্রধান ২টি কারণ-

0

অর্থনীতি ডেস্ক:

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযান, নতুন আমদানির ঘোষণা, টিসিবি’র খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি- সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে পেঁয়াজ তার ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অনেক কথা। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রধান ২টি কারণ- ভয় ও কার’সাজি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাজারে যখন কোনো পণ্যের দাম অ-স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন সেই অ-স্বাভাবিক দামের পত’নের সম্ভাবনাও তত বেড়ে যায়।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার পর থেকে সরকার বেশকিছু উদ্যোগের কথা বললেও এর দাম কিছুতেই কমছে না।

আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর গত ২ মাস প্রায় ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। তবে গত ১ সপ্তাহে আমদানির সেই পরিমাণ কমেছে।

এদিকে, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। মূলত পেঁয়াজের অ-স্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পর এখন সেই দামের পত’নের ক্ষণ গুণছেন ব্যবসায়িরা। তাই মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন আমদানিকারকরা। অর্থাৎ দাম পড়ে যাওয়ার ভয়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের এক বিক্রেতা বলেন, আমরাও পেঁয়াজ কম আনছি। কারণ বিক্রি হচ্ছে কম। যদি দাম আরও বেড়ে যায় এবং আমদানির পর বিক্রি না হয়, সেক্ষেত্রে কী করবো আমরা? সেজন্য কম আনছি। আগে ১শ কেজি নিতাম, বেশ কিছুদিন ধরে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ২০ কেজি করে নিচ্ছি।

এ তো গেল পেঁয়াজের দাম বাড়ার একটা কারণ। তবে পেঁয়াজের দাম ডাবল সেঞ্চুরি অতিক্রমের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বড় শিল্প গ্রুপগুলোর ‘গড়িমসি’।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের একটি সমিতি জানায়, পেঁয়াজের চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটানো হয় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে। বাকি ৪০ শতাংশ আমদানি করা হয়। বেশিরভাগ পেঁয়াজই ভারত থেতে আমদানি করা হয়।

জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পরপরই এস আলমসহ দেশের বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়। এ লক্ষ্যে বিশেষ ছাড়ে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এলসি খোলার পরও দেশে আসেনি আশানুরূপ পেঁয়াজের চালান।

সূত্র বলছে, গত দেড় মাসে চীন, মিসরসহ বিকল্প বাজার থেকে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হলেও দেশে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ৭ হাজার টন। প্রায় ঢাকঢোল পিটিয়ে ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এ লক্ষ্যে তারা ১১টি আমদানি অনুমতিপত্র নিয়েছে। অথচ এসবের বিপরীতে কোনো পেঁয়াজ এখনও বন্দরে এসে পৌঁছায়নি।

খাতুনগঞ্জের আজমীর ট্রেডিংয়ের মালিক মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর দামে বেশি হলেও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছিল। কিন্তু গত সোমবার থেকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। কারণ বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। ওই পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম পড়ে যাওয়ার আশ’ঙ্কায় ছোট আমদানিকারকরা মিয়ানমার থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছেন। অথচ মিশরের পেঁয়াজও বাজারে আসেনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত মিশর থেকে ৩ হাজার ৩০৬ টন, চীন থেকে ৮৭৬ টন, মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৮ টন, তুরস্ক থেকে ৮৬ টন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১১২ টন এবং পাকিস্থান থেকে ১৩৯ টন পেঁয়াজ বন্দরে এসেছে।

এছাড়া ৪১টি আমদানি অনুমতিপত্রের বিপরীতে মিশর, চীন, পাকিস্থান, তুরস্ক ও উজবেকিস্তান থেকে ৬৬ হাজার ১৬২ টন পেঁয়াজ আমদানি করার কথা রয়েছে। কিন্তু গত দেড় মাসে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ৭ হাজার টন।

খাতুনগঞ্জের জনতা ট্রেডার্সের ম্যানেজার ফিরোজ আলম মনে করেন, বড় শিল্প গ্রুপগুলো পেঁয়াজ আনতে যে গড়িমসি দেখাচ্ছে, এর পেছনে কার’সাজি থাকতে পারে। অনেকে চাইছে নিজেদের পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশের আগে স্থানীয় বাজারে দাম আরও একটু চড়িয়ে নিতে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, এলসি খুলেও যদি আমদানি না হয়, তবে এর পেছনে টাকা পাচা’রের মত ঘটনা থাকতে পারে। আবার দাম কমে যাওয়ার ভয়ে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এমনও হতে পারে। অর্থনীতির দিক দিয়ে দেখলে, এটিকে ‘অলিগোপলি’ বাজার তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ দফায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে এখন পেঁয়াজের দাম ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে শেষ ৩ দিনেই বেড়েছে ৮০ টাকা। এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতারাও অবাক।

ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় সেপ্টেম্বর থেকেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অ-স্থির। এরপর থেকে দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদনি পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল। কিন্তু ঘূ’র্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূ’র্ণিঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষ’তি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না- এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন, ফলে আবারও ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি।

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তৃতায় বলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এই বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টিকে আরও উ’স্কে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।

বুধবার ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়। বৃহস্পতিবার সেই দাম আরও বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার তা আরও বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনও দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।

শেয়ার করুন !
  • 105
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!