সময় এখন ডেস্ক:
দফায় দফায় দাম বেড়ে রাজধানীর কাঁচাবাজারে এখন সব থেকে বেশি দামের পণ্যের তালিকায় সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে পেঁয়াজ। কোনো সবজি-ই তার ধারে-কাছে নেই। আদা, রসুন এমনকি মাছ-মাংসেরও ওপরে চলে গেছে পেঁয়াজের দাম।
শীতের আগাম শাক-সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, শিম, পালং শাক, মুলা শাক, সরিষা শাকের ভরপুর সরবরাহের মধ্যে এখন বাজারে সব থেকে বেশি দামের সবজি পাকা টমেটো। তারপরও এ সবজিটির দাম পেঁয়াজের থেকে কেজিতে ১০০ টাকা কম।
বাজারে সব থেকে ভালো মানের পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি। আর পেঁয়াজের কেজি কোথাও ২৩০ টাকার নিচে মিলছে না। কিছু কিছু বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা ছুঁয়েছে। এ হিসাবে ১ কেজি পেঁয়াজের দামে প্রায় ২ কেজি পাকা টমেটো কেনা সম্ভব।
পাকা টমেটোর পাশাপাশি বাজারে দামি সবজির তালিকায় রয়েছে গাজর, শিম, বরবটি, নতুন আসা গোল আলু। এর মধ্যে নতুন গোল আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। শিম, গাজর ও বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর তুলনায় এখন পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি।
শুধু কি সবজি, বাজারে এখন সব ধরনের মুরগির থেকে পেঁয়াজের দাম বেশি। লাল কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজি। সোনালী মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ২২০-২৪০ টাকার মধ্যে। আর বাজার ভেদে বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩৫ টাকা। অর্থাৎ ১ কেজি পেঁয়াজ দিয়ে ২ কেজি বয়লার মুরগি কেনা সম্ভব।
বয়লার মুরগির মতো ১ কেজি পেঁয়াজ দিয়ে ২ কেজি তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, ছোট রুই, মৃগেল মাছও কেনা সম্ভব। কারণ এ মাছগুলোর কেজি ১৫০ টাকার মধ্যে।
এমনকি মাঝারি সাইজের রুই মাছের দামও এখন পেঁয়াজের থেকে কম। শিং মাছও মিলছে পেঁয়াজের থেকে কম দামে। ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বাজার ভেদে ২০০-২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর অনেক বাজারেই শিং মাছের কেজি ২২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পেঁয়াজের থেকে সচরাচর একটু বেশি দামেই বিক্রি হয় আদা-রসুন। এবার এ রীতিও বদলে গেছে। বাজারে এখন আদা রসুনের কেজি ২০০ টাকার নিচে।
সবজি, মাছ-মাংস, মসলার বাজার ছেড়ে ফল বাজারে গেলেও পেঁয়াজের থেকে কম দামে মিলবে বেশিরভাগ ফল। ১ কেজি পেঁয়াজের দামে পাওয়া যাবে ২ থেকে আড়াই কেজি আপেল। কারণ মানভেদে এখন আপেল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকা কেজি। ১ কেজি পেঁয়াজের দামে ২ কেজি কমলা লেবুও কেনা সম্ভব। বাজার ও মানভেদে প্রতিকেজি কমলা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা কেজি।
শুধু কি আপেল আর কমলা? না, আঙ্গুর, বেদানা, সফেদা, নাট ফল, মাল্টাও বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজের চেয়ে কম দামে। বাজার ভেদে আঙ্গুর পাওয়া যাচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা কেজির মধ্যে। বেদানা পাওয়া যাচ্ছে ১৫০-২২০ টাকার মধ্যে। মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৬০ টাকা কেজি।
ফল বাজার ছেড়ে মুদি দোকানে গেলেও বেশিরভাগ পণ্য মিলবে পেঁয়াজের থেকে কম দামে। ১ কেজি পেঁয়াজের দামে ভালো মানের মিনিকেট চাল পাওয়া যাবে ৫ কেজির ওপরে। কারণ এখন বাজারভেদে মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকা। আটা কিনলে ১ কেজি পেঁয়াজের দামে পাওয়া যাবে ৮ কেজির বেশি। সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে ৫ কেজি।
পেঁয়াজের এমন দামে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এমনকি পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক থেকে ৪৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এ হাতাহাতি হয়। পেঁয়াজ কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ এমন কাণ্ড ঘটেয়ে বসেন।
ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই পেঁয়াজের বাজার অ-স্থির হয়ে উঠে। দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় পৌঁছে দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদনি পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০-৮০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল।
কিন্তু ঘূ’র্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ঘূ’র্ণিঝড়ের কারণে ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষ’তি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে আবারো ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি।
এরপর হুট করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলে বসেন পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এ বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি আরও উ’স্কে দেয়। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। এর পরের দিনই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা পৌঁছে।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা। বুধবার ১৫০ টাকা থেকে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ১৭০ টাকা হয়। বৃহস্পতিবার সেই দাম আরও বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তা আরও বেড়ে ২৫০ টাকায় পৌঁছেছে। এর আগে কখনো দেশের বাজারে এত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি।
পেঁয়াজের এমন দামের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে রামপুরার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, পেঁয়াজের দাম মূলত সরকারের দুই মন্ত্রীই বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা পেঁয়াজের দাম কমার পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলে দাম আকাশচুম্বি করেছেন। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি ঘটেনি যে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা হয়ে যাবে। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরু’দ্ধে কার্যকর অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেই পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
খিলগাঁও তালতলা থেকে পেঁয়াজ কেনা সাবিলা নূর বলেন, গত সোমবার পেঁয়াজ কিনেছি ১৪০ টাকা কেজি। আজ পেঁয়াজের কেজি ২৪০ টাকা চাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম আরও বাড়ছে। বলেন তো পেঁয়াজের দাম যদি এত হয় তা কি করে মেনে নেয়া যায়?
তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে আর সরকারের মন্ত্রী বলছেন- পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। এতেই তো বোঝা যায় বাজার সম্পর্কে মন্ত্রীর কোনো ধারণা নেই। যে মন্ত্রী বাজারের খবর রাখে না তাকে দিয়ে কী করে বাজার তদারকি করবেন?