সস্তায় গৃহকর্মী-দারোয়ান-শ্রমিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের কাজে লাগাচ্ছে স্থানীয়রা

0

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

এমনিতে বাসা বাড়িতে কাজের লোক পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা শহরে গার্মেন্টসে চাকরিতে যোগ দেয়। বিকল্প হিসেবে তাই গৃহকর্মী ও প্রতিষ্ঠানের দারোয়ান বা শ্রমিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের রাখছে স্থানীয়রা। এতে খরচও কম, হুটহাট চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ারও সুযোগ কম।

আর এভাবে সহজেই স্থানীয়দের সাথে মিশে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছে রোহিঙ্গারা। এমনকি দীর্ঘ পরিচয় সূত্রে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ রোহিঙ্গাদের সাথে বিয়ে বন্ধনেও আবন্ধ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার শহরের কিছু আবাসিক এলাকার কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তির বাসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের প্রত্যেকের গৃহকর্মী রোহিঙ্গা, এমনকি বাসার দারোয়ানটিও রোহিঙ্গা। অথচ তারা মাঝে-মধ্যে রোহিঙ্গাবিরো’ধী সমাবেশে কড়া-কড়া বক্তব্য দেয়। তাদের কথায় প্রায় উঠে আসে রোহিঙ্গাবিরো’ধী বক্তব্য, রোহিঙ্গাদের প্রতি-হত করার কথা। এই অবস্থা শুধু কিছু এলাকার নয়, ভাল করে জরিপ চালালে দেখা যাবে অনেকের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসবে।

এ ব্যপারে কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক প্রিয়তোষ পাল পিন্টু বলেন, নিজের দোষ সংশোধন না করে অন্যকে উপদেশ দেওয়া ঠিক না। আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। আসলে রোহিঙ্গাদের যদি স্থানীয়রা আশ্রয় প্রশ্রয় না দিত, কোনোদিন তারা এত বে-পরোয়া হতে পারতো না।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ আলোচিত ব্যক্তি- টেকনাফের হাকিম ডাকা’ত। আমি জেনেছি স্থানীয় এক রাজনীতিবিদের হাত ধরেই তার উত্থান। এখনো তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে সেই নেতা। আর এটাও সত্য, স্বল্প মজুরি ও স্থায়ীত্বের কথা চিন্তা করে সমাজের দায়িত্বশীলরা রোহিঙ্গাদের কাজের লোক বা দারোয়ানসহ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করছে। যা মোটেও উচিত না, এটা দেশের আইনবিরো’ধী কাজ। আর স্থানীয়দের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা কিছুদিন পর স্থায়ী হয়ে যায়, আর ক্যাম্পে ফিরতে চায়না।

টেকপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোজ্জাম্মেল হক বলেন, এলাকার ইমাম হিসাবে অনেক মানুষের বাসা বাড়িতে আমাদের যাওয়া আসা হয়। তখন দেখি অনেক প্রভা’বশালী মানুষের বাসার কাজের লোক রোহিঙ্গা। দেখা গেছে, অনেক বছর ধরে এই বাড়িতে কাজ করছে। আবার অনেকের দারোয়ানসহ অন্য কর্মচারীরাও রোহিঙ্গা। যারা অনেক বছর আগে এসেছে, বর্তমানে তাদের রোহিঙ্গা পরিচয় নেই। বরং তারা পাকাপোক্তভাবে স্থানীয় হয়ে গেছে। অনেক সময় দেখা যায়, ছোটবেলা থেকে যে বাড়িতে কাজ করছিল, দেখে শুনে স্থানীয়দের সাথে রোহিঙ্গা মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। এতে সেই রোহিঙ্গা স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

উখিয়ার সুজন সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার ও রাজনীতিবিদ সোলতান মাহমুদ চৌধুরীর সাথে কথা হয়। তারা জানান, উখিয়া টেকনাফের বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি এমনকি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বাসাবাড়িতেই কাজের লোক হিসেবে কর্মরত আছে রোহিঙ্গা। এমনও তথ্য আছে, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঢাকা চট্টগ্রামে থাকা তাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য রোহিঙ্গা মেয়েদের বাসাবাড়িতে কাজ করতে পাঠিয়েছে।

তারা আরও জানান, উখিয়া টেকনাফের বেশির ভাগ খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেলে কর্মরতদের ৯৫% রোহিঙ্গা। এটা শতভাগ সত্য যে, ঘরে বাইরে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে আবার তারাই রাস্তায় যে কোন অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাদের বিরু’দ্ধে কথা বলে। স্থানীয়রা আজকাল শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে চায় না। করলেও বেশি পারিশ্রমিক চায়। সেক্ষেত্রে কম মজুরিতে রোহিঙ্গা শ্রমিক পাওয়া যায় তাই মানুষ তাদের ব্যবহার করে।

এ ব্যপারে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, আমি মুখে যেটা বলবো, সেটা ঘরে বাইরে বাস্তবেও করে দেখাতে হবে। তাহলেই আমি প্রকৃত সৎ মানুষ বলে নিজেকে দাবী করতে পারবো।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় মানুষরা আশ্রয় প্রশ্রয় না দিলে কোনোভাবেই তারা ক্যাম্পের বাইরে আসতে পারেনা। একটু ক’ষ্ট হলেও বেশি মজুরী দিতে হলেও স্থানীয়দের নিয়োগ দিতে হবে। কোনোভাবেই যেন রোহিঙ্গারা তাদের নির্ধারিত ক্যাম্প থেকে অন্য কোথাও যেতে না পারে, সেটা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!