প্রবাস ডেস্ক:
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পরই মধ্যপ্রাচ্যে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান মন্ত্রী। এসময় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কোর্স ও বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরও বলেন, নারীকর্মীরা যাতে বিদেশে গিয়ে নিরাপদে ও সম্মান নিয়ে কাজ করতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো। ব্যর্থ হলে অন্য ব্যবস্থা নেব।
নারীকর্মী না পাঠালে পুরুষকর্মী নেয়াও বন্ধ করে দিবে সৌদি কর্তৃপক্ষ, এমন আশ’ঙ্কার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, নারীকর্মীর সঙ্গে পুরুষকর্মী সংযুক্ত থাকতেই হবে- আমি এটা এগ্রি করি না।
তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ পেলে ‘নির্যা’তিত সুমির’ প্রসঙ্গেও সৌদি আরব কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান মন্ত্রী।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি ও জনশক্তি রপ্তানির সাথে জড়িত এজেন্সিগুলোর সমিতি বায়রার হিসেবে গত বছর ১ লাখেরও বেশি নারী শ্রমিক মধ্য প্রাচ্যের নানা দেশে গৃহ-শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন। যাদের ৮০ শতাংশের গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। তাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ গৃহশ্রমিক জানিয়েছেন তারা নির্যা’তনের শিকা’র।
বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলামকে প্রশ্ন করা হয়- কেন আরব দেশগুলোতে নারী গৃহশ্রমিকদের এমন পরিস্থিতির শিকা’র হতে হচ্ছে?
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষজন এদেরকে বলে মিস্কিন। বিদেশে যাওয়ার আগে যে তারা এজেন্সিগুলোকে টাকা দেয় তারা ধরে নেয় যে এদেরকে কিনে নিয়ে আসছে। তারা দাসপ্র’থার মতো ধরে নিচ্ছে। বাংলাদেশ সৌদি আরবের মতো দেশকে চাপ সৃষ্টি করতে পারছে না। কারন বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দিকে তাদের চেয়ে কম প্রভাবশালী দেশ।
সুমাইয়া আরো বলেন, আর যেহেতু তাদের কোন বিচার হচ্ছে না তাই তারা এটা করতে পারছে। কোন রেমেডি হচ্ছে না, কারণ সরকার বা আমাদের মতো সংগঠনগুলো বা ওইসব দেশে যেসব মানবাধিকার সংগঠন আছে, আমরা কাউকে, কোন এমপ্লয়ারকে আইনের মুখোমুখি করতে পারিনি। তারা এই সুযোগগুলো নিচ্ছে। আমরা একটা শক্ত অবস্থানে যেতে পারছি না যে আমাদের নারীদের প্রতি যদি কোনো ধরনের সহিং’সতা হয় তাহলে আমরা নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করব।
ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, অনেক দেশই বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ফিলিপাইন বেশ কবার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ নেপাল ২০১৬ সালে নারীদের গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে যাওয়া অ’বৈধ ঘোষণা করেছে। বেশ কয়েকবার শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেয়ার হুম’কি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলংকা।
সুমাইয়া ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এই ব্যাপারে সৌদি আরবের মতো দেশকে চাপ দিতে পারছে না। আমাদের শ্রম বাজারের একটা বড় যায়গা হচ্ছে সৌদি আরবে। শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্স যখন বলল যে আমরা তোমাদের নারী শ্রমিক দেব না, গৃহশ্রমিক দেব না, তখন সৌদি আরব শর্ত দিল যে যদি একজন নারী শ্রমিক পাঠানো হয় তাহলে তোমাদের দেশ থেকে ২ জন পুরুষ শ্রমিক নেব। স্বভাবতই তখন আমাদের দেশের শ্রমিকরা চিন্তা করেছে, ঠিক আছে আমার যদি পুরুষ শ্রমিক যায়, আর তারা যা বলতেছে যে ফোন ব্যবহার করতে দেবে, ঠিকমতো বেতন দেবে, কোনোরকম অত্যা’চার হবে না- তখন সরকার রাজি হল আমরাও সিভিল সোসাইটি রাজি হলাম।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু সরকারের মনিটরিং সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল। ওখানকার এজেন্টকে, এমপ্লয়ারকে বাধ্য করতে পারে এরকম কোন ক্লজ এই চুক্তির মধ্যে নাই।
এই চুক্তি হয়ে ২০১৫ সালে। তার আগে বেশ কিছুদিন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ রেখেছিল সৌদি আরব। আর ওদেরকে চাপ দেয়ার মতো কোনো সুবিধাজনক পরিস্থিতিতেও নেই বাংলাদেশ। অলিখিত নিয়ম রয়েছে, গৃহকর্মে নিয়োজিত হওয়ার জন্য ১ জন নারী শ্রমিক পাঠালে ২ জন করে পুরুষ কর্মী নেয়া হবে গৃহস্থালিতে গাড়িচালক বা বাগান পরিচর্যাকারী এমন কাজের জন্য। পুরুষ কর্মীরা নিজের খরচে যাবেন, কিন্তু নারী শ্রমিকদের জন্য উল্টো চাকরিদাতা বিমান ভাড়াসহ সব খরচ দেবে।
বেশ কয়েকটি দেশের শক্ত অবস্থানের কারণে নারী শ্রমিকদের দিয়েই সৌদিতে বাংলাদেশের শ্রম বাজার খুলে রাখা হয়েছে কিনা – সেই প্রশ্নটিও উঠছে। কিন্তু কেন নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না?
জনশক্তি রপ্তানির সাথে জড়িত এজেন্সিগুলোর সমিতি বায়রা’র মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রশ্নটা হচ্ছে ঘটনাটি ঘটছে এমপ্লয়মেন্ট এন্ডে। এখন এমপ্লয়মেন্ট এন্ডে আমরা কীভাবে তাকে প্রটেক্ট করবো? আমাদের কমিউনিকেশন স্কিল আপ করতে হবে। কারণ এই এবিউজ যেটা হচ্ছে তা শুরুই কিন্তু হচ্ছে কমিউনিকেশনের অভাবের জন্য। একটি নিয়োগকর্তা যখন এতগুলো পয়সা খরচ করে একটি মেয়েকে নিয়ে যান, আর সে যদি আন্ডার পারফর্মার হয়, তাহলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কিল আপ করতে হবে। এম্ব্যাসির ওয়েলফেয়ার উইংকে শক্ত করতে হবে। লোকবল দিতে হবে। কারণ সৌদি আরব একটা ভাস্ট কান্ট্রি। একটি জায়গা থেকে আরেকটি জায়গায় যেতে ১২/১৪শ কিলোমিটার। আর ডোমেস্টিক একটি কর্মী একটি বাসায় থাকেন। ইটস আ ভেরী ডিফিকাল্ট টাস্ক।
শামীম আহমেদ চৌধুরীর মতে, ডেসটিনেশন কান্ট্রিতে কোন প্রবলেম হলে সেটি সেখানেই প্রুভ করতে হবে। কিন্তু আমরা যখন কিছু প্রুভ করতে যাই, যখন মেয়েটি ও তার এমপ্লয়ারকে কোর্টে হাজির করা হয়, আর তখন সে বলে মালিক তার কিছু করে নাই। তাই মামলাটি আর থাকেনা। কারণ সে মনে করে যদি মামলাটি এসটাবলিশ হয় তাহলে দেশে ফিরে আসতে বিলম্ব হবে। এই কারণে যিনি অ’ন্যায়টি করলেন তাকে আর পানিশমেন্টে দেয়া যাচ্ছে না।