অর্থনীতি ডেস্ক:
পেরিলা, একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভোজ্যতেল ফসল। বৈজ্ঞানিক নাম Perilla frutescens. আদি নিবাস চীন হলেও বিশ্ব দরবারে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে পরিচিত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর বিস্তৃতি ঘটেছে জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে।
সম্প্রতি বাংলাদেশেও স্বপ্ন-সম্ভাবনার জানান দিচ্ছে এই পেরিলা। পেরিলার চাষ ও গবেষণার মাধ্যমে সেই স্বপ্ন-সম্ভাবনার সারথি রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)। শেকৃবি কৃষি তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ এম এম তারিক হোসাইনের অধীনে কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার পিএইচডি গবেষণার অংশ হিসেবে পেরিলার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গবেষক আবদুল কাইয়ুম বলেন, পেরিলা ভোজ্যতেল জাতীয় ফসল, যার শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ-সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরো’ধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। মূলত সুস্বাস্থ্য ও জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিককে গুরুত্ব দিয়ে আমরা এ গবেষণা বেছে নিয়েছি।
মূল জমিতে পেরিলার জীবনকাল ৭০ থেকে ৭৫ দিন হওয়ায় সহজেই এটিকে ৪ ফসলি জমির আওতায় আনা সম্ভব। উদ্ভিদটির একেকটি পুষ্পমঞ্জুরিতে ১০০ থেকে ১৫০টি বীজ পাওয়া যায় বিধায় অন্যান্য তেলফসল থেকে এর উৎপাদনমাত্রা অবশ্যই বেশি হবে,- জানান এই গবেষক।
গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ড. তারিক বলেন, পেরিলার পাতা সবজি হিসেবে ও বীজকে তেল উৎপাদনে লাগিয়ে মূলত ২ ভাবে ব্যবহার করা যায়। পেরিলা ক্ষেতে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনায় বাণিজ্যিকভাবে পাশাপাশি মধু চাষও সম্ভব। আমাদের দেশে চাইনিজ, কোরিয়ান ও থাই রেস্টুরেন্টগুলোতে বাইরে থেকে পেরিলা আনা হয়, সেক্ষেত্রে দেশে পেরিলা চাষের বিস্তৃতি আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপ-তত্ত্বাবধায়ক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন বলেন, দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন তেল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়, যার বেশির ভাগই সয়াবিন এবং এটি একটি জিএমও ফসল।
তাছাড়া সরিষার তেল বেশি খেলে বিদ্যমান কিছু রাসায়নিক উপাদান শরীরে বি’রূপ প্রভাব ফেলে। সেক্ষেত্রে পেরিলা দেশে ভোজ্যতেলের ঘা’টতি পূরণের পাশাপাশি সুস্থ জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে জানান তিনি।