কলকাতা প্রতিনিধি:
ঘটনাস্থল পশ্চিবঙ্গের বীরভূম জেলার মল্লারপুর স্টেশন চত্বর। চলছে রেসলিং দু’টো মদ্দা হনুমানের মধ্যে। সকাল ৯টা, ব্যস্ত সময়। হনুমানের রেসলিং দেখতে ভিড় জমে উঠেছিল। কে কাকে পরাজিত মাটিতে করতে পারে, দেখছে দাঁড়িয়ে জনতা, হাততালিও দিচ্ছেন কেউ কেউ।
এই ঘটনায় আহত হয় দু’টি হনুমানই। কিছুক্ষণ পর একটি পালিয়ে যায়। অন্যটি বসে থাকে চুপ করে। বেশ কয়েক জায়গায় ক্ষ’ত থেকে র’ক্ত পড়তে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকা একটি টোটোয় (৩ চাকা বিশিষ্ট ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা) চড়ে বসে আহত হনুমানটি। করুণ চোখে সহযাত্রীদের গায়ে হাত রেখে বোঝানোর চেষ্টা করে সে আক্র’মণ করবে না। মল্লারপর স্টেশন থেকে খানিকটা দূরে পঞ্চায়েত ভবন। সেখানেই একটি ফার্মেসির সামনে ঝুপ করে নেমে পড়ে হনুমানটি।
ফার্মেসির মালিক আনাজুল আজিম বলেন, দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করছিল হনুমানটি। দোকানের ভিড় একটু কমতেই লাফ দিয়ে কাউন্টারে উঠে বসে কোমরের নীচে ও শরীরের অন্য অংশে ক্ষ’তগুলো দেখাতে থাকে। আমার হাত ধরে এমন ভাব করে যেন চিকিৎসা চাইছে।
দোকানে ও’ষুধ নিতে এসেছিলেন স্থানীয় এক যুবক। তিনিও হাত লাগান আহত হনুমানটির ক্ষ’তে মলম ও ব্যান্ডেজ করায়। মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার পরেও ক্ষ’তগুলি বারবার দেখাতে থাকায় ওই আজিম বুঝতে পারেন, ব্যথার জন্য হনুমানটি এরকম করছে।
তারপর কাপে পানি নিয়ে একটি ব্যথা কমার ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় তাকে। সঙ্গে খান চারেক কলা। কিছুক্ষণ বসে থেকে আজিমের কাঁধে হাত রেখে দোকানের কাউন্টার থেকে রাস্তায় নেমে ফের একটি স্টেশনগামী টোটোয় চড়ে বসে সে।
মল্লারপুরের এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয় বছর আড়াই আগে এরকমই এক শনিবারের সকালে চুঁচুড়া ইমামবাড়া (সদর) হাসপাতালে পুরষ বিভাগে কর্তব্যরত নার্সদের চমকে দিয়েছিল একটি হনুমান। ডান পায়ে র’ক্ত পড়ছিল। নার্সদের বারবার ক্ষ’ত দেখিয়ে হাত নেড়ে ডাকতে থাকে হনুমানটি।
অন্যরা ভয় পেলেও একজন নার্স এগিয়ে এসে হনুমানটির চিকিৎসা করেন। ব্যান্ডেজ করে দেন পায়ে। তারপরে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে চিকিৎসা করা হয়েছে বুঝতে পেরে চলে যায় হনুমানটি।
বন্যপ্রাণী গবেষক শান্তিনিকেতনের ঈশানচন্দ্র মিশ্র বলেন, যে সব প্রাণী মানুষের কাছাকাছি থাকে তাদের কেউ কেউ মানুষের আচরণ, কার্যকলাপ অনুসরণ করে। হনুমান, বাঁদর বা কুকুরের অনুসরণের ক্ষমতা অনেক বেশি।
1.6K