সময় এখন ডেস্ক:
কর্নেল অলি আহমদের সঙ্গে কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ রাজনীতি করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন এলডিপির (একাংশ) সদ্য ঘোষিত সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী।
তিনি বলেছেন, কর্নেল অলি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝেন না। সব কিছুতেই তিনি নিজের স্বার্থ দেখেন।
সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে এলডিপির নতুন আহ্ববায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এলডিপিতে আনুষ্ঠানিক ভা’ঙন দেখা দিল।
গত ৯ নভেম্বর কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদকে সভাপতি এবং ড. রেদোয়ান আহমেদকে মহাসচিব করে এলডিপির নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এই কমিটি থেকে বাদ পড়েন দলটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তারপর থেকেই মূলত দলটির মধ্যে ভা’ঙনের সুর ওঠে। আজ তা চূড়ান্ত রূপ পেল।
আজ প্রেস ক্লাবে এলডিপির পদবঞ্চিত নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে অলি আহমেদ এবং রেদোয়ান আহমেদ কমিটির বিপরীতে পাল্টা ৭ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করেন।
এলডিপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এই কমিটি ঘোষণা করেন। সমন্বয় কমিটির সভাপতি হিসেবে আবদুল করিম আব্বাসী নাম ঘোষণা করা হয় এবং সদস্যসচিব হন সেলিম।
পরে সংবাদ সম্মেলনে আব্বাসী বলেন, আজ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির পরিস্থিতি ভ’য়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলতেও আমার লজ্জা হয়। শুধু এক কথায় বলব, দেশের পরিস্থিতি এখন ভ’য়াবহ। আমার ৮৪ বছর বয়স হয়েছে, বাঁচার আর সাধ নেই। অনেক দেখেছি, বুঝেছি। এখন দেশেই স্বাভাবিক মৃ’ত্যু চাই। এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া।
নিজের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে করিম আব্বাসী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্রলীগ করেছি। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক দুঃখ-ক’ষ্ট সহ্য করেছি। মুক্তিযু’দ্ধ করেছি। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করি। আমি ২৪ বছর নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলাম। জাতীয় সংসদে ৫ বার নির্বাচন করেছি, ৩ বার হুইপ ছিলাম। আমার এলাকার মানুষ, এই দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে।
তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হতো তাহলে ফলাফল কী দাঁড়াতো তা আমরা সবাই জানি। কেউ সত্যি কথা বলতে চায় না, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের কলম স্ত’ব্ধ হয়ে গেছে। তারপরও বলব, জাতির প্রয়োজনে সবার এগিয়ে আসা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম বলেন, গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের রোষা’নলে পড়ে কারাব’ন্দি রয়েছেন। তাকে মুক্ত করার জন্য যখন দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ার দরকার, তখন নিজেদের মধ্যে বি’ভেদ তৈরি করার জন্য একটি পক্ষ তৎপর হয়ে উঠেছে।
এর মধ্যে কর্নেল অলি সাহেব তার এক বক্তব্যে পুরো বিএনপির নেতৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তার এই বক্তব্যে (তিনি) বেগম খালেদা জিয়া কারাব’ন্দি থাকায় এবং তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় বিএনপির নেতৃত্ব নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের এই ক্রা’ন্তিলগ্নে যেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রয়াস চালাবেন সেখানে জোটের মধ্যে বি’ভেদ তৈরির জন্য জাতীয় মুক্তি মঞ্চ তৈরি করেছেন।
শুরুতে মুক্তি মঞ্চকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম বলা হলেও ধীরে ধীরে তার জিয়া পরিবার আর বিএনপির বিষো’দ্গার করার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বিত’র্কিত আর দুর্বল করার চেষ্টা ষড়’যন্ত্র শুরু করে। যা আমাদের মতো জাতীয়তাবাদী আদর্শের পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কোনো দলের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানো আমাদের জন্য দু’রূহ হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অঙ্গীকার করছি, দেশের এই ক্রা’ন্তিকালে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিকদের দু’র্দিনে দেশপ্রেমিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতিতে আরও বলিষ্ঠভাবে অংশগ্রহণ করব। সঙ্গে সঙ্গে সব ষড়’যন্ত্র মোকাবিলায় সক্ষম হব। নিজেদের নিয়োজিত করার লক্ষ্যে সারাদেশে এলডিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অচিরেই একটি কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হব।
এই প্রয়াসে বিএনপি স্বীকৃতি দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সেলিম বলেন, বিএনপি ভেঙে এলডিপি গঠন করে যে পাপ করেছি তার প্রায়’শ্চিত্ত করতে চাই।