সময় এখন ডেস্ক:
❝পূর্ব পাকিস্থানের লবণের দু’ষ্প্রাপ্যতার জন্যে প্রদেশের সর্বত্র গভীর অ-সন্তোষের সৃষ্টি হইয়াছে। লবণের অভাবের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন মত পোষণ করিয়াছেন। কিন্তু সাধারণভাবে ইহার আসল কারণ কাহারও জানা নাই। তবে করাচী হইতে অ-পর্যাপ্ত সরবরাহই যে ইহার মূল কারণ তাহা নিঃসন্দেহে বলা চলে। সরকার নিযুক্ত লোভী আড়তদারদের অতিরিক্ত মুনাফা লোভই সম্ভবতঃ বর্তমান পরিস্থিতির কারণ। সের প্রতি ২ টাকা হইতে আরম্ভ করিয়া স্থানবিশেষে ১৬ টাকা পর্যন্ত লবণ খরিদ করিতে লোক বাধ্য হইতেছে।❞
এটি ছিল ১৯৫০ সালে সংবাদ পত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ। সেই সময় দেশে লবণ নিয়ে এক ভ’য়াবহ কাণ্ড ঘটেছিল। এরপরও কয়েকবার লবণ নিয়ে হাহাকার হয়েছে দেশে। কিন্তু সেই দিন এখন শুধুই ইতিহাস। এখন প্রযুক্তি, কাঁচামালের পর্যাপ্ততা ও চাষীদের আগ্রহে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে দেশে।
কিন্তু সম্প্রতি দেশে পেঁয়াজ নিয়ে ঘটে যাচ্ছে লঙ্কা’কাণ্ড। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই গুজব ছড়িয়েছে ‘লবণ’ নিয়ে। এক শ্রেণীর অ’সাধু ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে খুচরা ও পাইকারী বাজারে ‘লবণ’র দাম বেড়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে। আর এমন খবর পেয়ে ক্রেতারা আগেভাগে লবণ ক্রয় করতে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন দোকানে। তবে এমন খবর গুজব বলে জানিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।
গতকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) সিলেট শহরে যখন টিসিবি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ঠিক তখনই বিভিন্ন উপজেলার বাজারে ‘লবণ’ নিয়ে চলে তেলেসমাতি। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিলেটে লবণের দাম বেড়েছে প্রচার করলে মুহুর্তের মধ্যে ভিড় জমে যায় বিভিন্ন দোকানে।
এদিকে, প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বাজারে প্রচুর পরিমাণের লবণ মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। গুজব ছড়িয়ে যারা বেশি দামে লবণ বিক্রি করবে তাদের বিরু’দ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।
জানা গেছে, প্রতি কেজি লবণের দাম ১০০-১২০ টাকা হয়ে যায় এমন গুজব ছড়ানোর ফলে। ঢাকাতেও কোনো কোনো জায়গায় ১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে লবণ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ ধরনের গুজব কেউ ছড়ালে তাদের বিরু’দ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন গুজবে বিভ্রা’ন্ত হয়ে বেশি মুনাফার লোভে বিভিন্ন বাজারে লবণ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূ’প প্র’তিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে, এমন গুজবে সাধারণ মানুষ লবণ কিনতে ভিড় করছেন বিভিন্ন হাটবাজারে। আর দাম বেড়ে যাওয়ার আশ’ঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীও লবণ গুদামজাত করতে শুরু করেছেন।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিসিক জানায়, লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮.২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে লবণের মজুদের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মিলগুলোতে মজুদ রয়েছে। তবুও একটা মহল লবণ ঘা’টতি সংক্রান্ত বিভ্রা’ন্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে দেশে লবণের কোনও সং’কট নেই— সারাদেশের প্রশাসনকে সেটি জানানো হয়েছে।
লবণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও পরিবেশনের জন্য বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০২-৯৫৭৩৫০৫। যে কেউ এই নম্বরে কল করে তথ্য জানতে পারবেন।
এ নিয়ে জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের বলেন, গুজব সৃষ্টিকারীদের ধরতে আমরা মাঠে নেমেছি। বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা কথা বলে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি, লবণের দাম বাড়েনি, কেউ লবণের দাম নিয়ে কার’সাজি যাতে না করেন। এরপরও কোন ব্যবসায়ী গুজবে কান দিয়ে কার’সাজি করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ বলেন, লবণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এ ধরণের গুজব ছড়িয়ে কেউ বিভ্রা’ন্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বাজার মনিটরিং করে লবণের দাম স্বাভাবিক রাখবো।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তারা কালীঘাটের লবণ কিনে নিয়ে সং’কটের গুজব ছড়ানো অ-সাধু ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন।