বিশেষ সংবাদদাতা:
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী সন্নিকটে। আর বাংলাদেশের বয়স তাঁর অর্ধেক- ৪৯। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরের বাংলাদেশের বয়স ৪৮ বছর। আর ৭৫ এর কালরাতে ইতিহাসের বর্ব’রতম সেই হ’ত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশের বয়স আজ ৪৪।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর অর্থাৎ ১ হাজার ৩১৪টি দিন দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যেই যুদ্ধ বিধ্ব’স্ত এই দেশকে ধ্বং’সস্তুপ থেকে টেনে তুলেছিলেন তিনি। একারণেই প্রশ্ন জাগে, ৭৫ এর সেই কালরাত যদি না আসতো তাহলে বাংলাদেশ আজ কোথায় থাকতো?
অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত তার ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ’ বইয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি অর্থশাস্ত্রের নানা তত্ত্ব-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নে মালয়েশিয়াকে টপকে যেত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের সম্ভাব্য পরিমাণ হতো ৪২ হাজার ১৫৮ কোটি ডলার। কিন্তু বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে সেই জিডিপির পরিমাণ মাত্র ৮ হাজার ৮৫৫ কোটি ডলার (২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী)।
আবুল বারকাত তার বইয়ে বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক নীতি খুব সূক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে থাকলে ২০১১ সালেই মাথাপিছু দেশজ উৎপাদনে মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করতো বাংলাদেশ।
১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মাথাপিছু প্রকৃত আয় (পিপিপি) ছিল ১ হাজার ৪০০ ডলার। আর বাংলাদেশের ৩০০ ডলার। বর্তমানে মাথাপিছু প্রকৃত আয়ে বাংলাদেশের থেকে প্রায় ৮ গুণ এগিয়ে মালয়েশিয়া। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শাসন অ’ব্যহত থাকলে ২০১১-তেই বাংলাদেশের মাথাপিছু প্রকৃত আয় ১৪ হাজার ১০০ ডলারে পৌঁছাত বলে জানিয়েছেন আবুল বারকাত।
অর্থনীতিবিদ বারকাত বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন গ্রামের মানুষের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হলে বাংলার প্রতিটি গ্রামের চিত্র আমূল পাল্টে যেত। সংজ্ঞাগত কারণেই তখন গ্রামকে আর গ্রাম বলা যেত না। বর্তমানে ৭২ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে অন্যদিকে শহরে থাকেন মাত্র ২৮ শতাংশ।
আবুল বারকাত দেখিয়েছেন যে, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এই চিত্রটাই একেবারে উল্টো হয়ে যেত। তখন ৭৫ জন শহরবাসীর বিপরীতে গ্রামে বাস করতেন মাত্র ২৫ জন মানুষ।
বর্তমানে জীবিকার আশায় শহরে আসা মানুষ প্রথমে স্বল্প মজুরিতে কাজ করে প্রথমে নিঃ’স্ব হচ্ছে। এরপর নিঃ’স্ব থেকে নিঃ’স্বতর হয়ে ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এমন পরিস্থিতি হতো না বলেই উল্লেখ করেছেন আবুল বারকাত।
তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়িত হলে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে এলেও তারা অপেক্ষাকৃত জ্ঞানসমৃদ্ধ সুস্থ সবল ও দক্ষ আলোকিত মানুষ হিসেবে উন্নত জীবন গড়তে পারতেন।
কিন্তু পরি’তাপের বিষয় হলো যে, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নৃশং’স হ’ত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতির পিতার উন্নয়ন দর্শনের পুরো প্রক্রিয়াটাই থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে পুরো একটি জাতির উন্নয়নের যাত্রাই থমকে গিয়েছিল।