শেখ পরশের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পেছনের গল্প

সময় এখন ডেস্ক:

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের দিনটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে দু’র্বিষহ দিন। ঐ দিনে তিনি হারান তার মা-বাবা দুজনকেই। একমাত্র ভাই আর তিনি ছিলেন একেবারেই শিশু। সেই অবস্থা থেকে এতটা পথ পাড়ি দেবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। এক অজানা আশ’ঙ্কা আর আত’ঙ্কে তাদের জীবন কেটেছে।

কিন্তু তারপরেও যাদের নীতি আর্দশ থাকে অটুট, যাদের চেতনা থাকে জাগ্রত তারা ভয়কে জয় করে। আর ভয়কে জয় করেই পরশ একজন শিক্ষিত, সচেতন এবং পরিশুদ্ধ নাগিরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপনার দায়িত্ব পালন করতেন। নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে রাখতেন সব সময়। ভাই ফজল নূর তাপস ব্যারিষ্টারি এবং রাজনীতিতে এলেও তিনি সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা রেখেছিলেন। এমনকি শেখ মনির পুত্র হওয়া সত্বেও তাকে রাজনীতির অঙ্গনে, কিংবা ক্ষমতা প্রভাব প্রতি’পত্তির চৌহদ্দিতে তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। সেই পরশই এবার নিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দায়িত্ব।

কিছুদিন আগেও পরশকে যখন কেউ জিজ্ঞাসা করতেন, আপনি রাজনীতিতে আসছেন কি না, আপনি রাজনীতি করবেন কিনা? তখন পরশ বিনয়ের সঙ্গে বলতেন রাজনীতি আমার বিষয় নয়, আমি পড়াশোনা করি এটিই আমার কাজ। কিন্তু সেই পরশ রাজনীতিতে আসার বিষয়ে কীভাবে রাজি হলেন তা নিয়ে কিছুটা কৌতুহল দেখা দিয়েছে সবার মনে। এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছে অনলাইন পোর্টাল বাংলা ইনসাইডার।

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরু’দ্ধে যখন নানা অভিযোগ এবং ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের বিরু’দ্ধে ক্যাসিনো বাণিজ্যের অভিযোগে যুবলীগ প্রায় ইমেজ সংক’টের তলানীতে পৌঁছে গেছে সেসময় পরশকে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরশকে ডেকে নিয়ে তার পিতা শেখ মনির হাতে গড়া সংগঠনটির হাল সম্পর্কে পরশকে অবহিত করেন। এতে পরশ দুঃখিত হন এবং তিনি এই অবস্থা কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করেন। জানা গেছে, এর পর পরই আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে বৈঠক হয় যুবলীগের নেতৃবৃন্দের। যুবলীগের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে তার দায়িত্ব থেকে অ’ব্যহতি দেয়া হয়। ওইদিনই আলোচনায় এসেছিল শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম এবং কয়েকটি গণমাধ্যম ফজলে নূর তাপসকে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়েছে দাবী করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যদিও ফজলে নূর তাপস জানান, এ ধরনের কোন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য জানা গেছে, গুজবের উৎস ছিল যুবলীগের বৈঠকের দিন তাপসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাপসের সঙ্গে কথা বলার বিষয় ছিল, পরশ যেন রাজনীতিতে সক্রিয় হয় এবং যুবলীগের এই অস্তিত্ব সং’কটে পরশ যেন সংগঠনের হাল ধরে সে বিষয়টি তাপসকে বোঝানো। এর পরপরই যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয় চয়ন ইসলামকে এবং সদস্য সচিব করা হয় হারুন অর রশীদকে। এরপর তাপস তার ভাইয়ের সাথে যুবলীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন।

যেহেতু তাপস আইন পেশায় জড়িত। আইন পেশা ছাড়াও তিনি সংসদ সদস্য এবং এলাকার অনেকগুলো কাজের সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় যুবলীগের মত একটি বড় সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার যেহেতু ফজলুল হক মনির হাতে গড়া সংগঠন, সে জন্য তা রক্ষায় তাদের পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে বলেও তাপসকে বোঝান প্রধানমন্ত্রী।

এই অবস্থায় তাপস কিছুটা নমনীয় হন, তিনি পরশকে বোঝান। জানা যায়, এরপর পরশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু-দফায় কথা বলেন। দু- দফায় তার দায়িত্ব নিলে যুবলীগ কীভাবে উপকৃত হবে, যুবলীগে কেন মেধা ও মননশীল ব্যক্তি দরকার এই বিষয়টা তাকে বোঝান। তখনই পরশ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজি হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তাপসের স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন, পরশকেই যুবলীগের চেয়ারম্যান করা হবে। এরপর পরশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

উল্লেখ্য, শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে। সে সময় তার উদ্দেশ্য ছিল দেশের সেবা করার জন্য যুব সমাজকে একত্রিত করা। তাদেরকে একটি যুক্তিমনস্ক, মেধামনস্ক আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

যুবলীগ পরবর্তীতে ক্যাসিনো টেন্ডারসহ নানা বি’তর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এখন পরশের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে তার পিতার স্বপ্নের যুবলীগের মত করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটি বন্ধুর পথ, কিন্তু পরশ যে সেই পথ পাড়ি দিতে পারবেন তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের নেতারা।