সময় এখন ডেস্ক:
পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমাতে দৈনিক ১ লাখ পিস সোনালী ব্যাগ উৎপাদনের কার্যক্রম চালু করেছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। এতে অর্থায়ন করছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড।
রোববার সংসদ ভবনে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৭ম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বলা হয়, ড. মোবারক আহমেদ খান আবিষ্কৃত পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ উৎপাদনে অধিকতর গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ ও সম্পাদন শীর্ষক প্রকল্পে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দের জন্য ইতোমধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় হতে প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়েছে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মির্জা আজম। উপস্থিত ছিলেন- কমিটির সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, রনজিত কুমার রায়, মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহীন আক্তার, আব্দুল মমিন মণ্ডল, খাদিজাতুল আনোয়ার এবং তামান্না নুসরাত (বুবলী)। এ ছাড়া বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাট ও বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রথমবারের মতো ‘বস্ত্র দিবস’ পালনের পদক্ষেপ নিতে ওই বৈঠকে সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে এ সেক্টরের যাবতীয় কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য সুপারিশ করা হয়।
পাট থেকে ২০ মিনিটে তৈরী হচ্ছে ঢেউটিন- ড. মোবারক আহমেদ খান এর আরেকটি আবিষ্কার:
পাট দিয়ে পরিবেশবান্ধব টিন তৈরির বিস্ময়কর এক আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান। পাটের ইংরেজী প্রতিশব্দ হচ্ছে জুট। তাই পাট দিয়ে তৈরি বলে এই টিনের নাম জুটিন। সোনালী ব্যাগের আবিষ্কারক বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, এই জুটিন ১০০ বছর অনায়াসে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারবে।
টিনের প্রধান উপকরণ লেড এবং জিংকের যোগান পুরোটাই আমদানি নির্ভর। এই অর্থসাশ্রয়ের কথা চিন্তা করেই প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানী আবিষ্কারটি করেন। কারণ এই জুটিনের ব্যবহার বাড়লে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা।
এছাড়াও আমরা প্রতিনিয়ত যে ধাতব টিনগুলো দেখে থাকি সেগুলো কিছুদিন পরেই মরিচা ধরে যায়, ব্যবহারের অ-যোগ্য হয়ে পড়ে এবং এতে পরিবেশ নানাবিধ হুম’কির সম্মুখীন হয়। কিন্তু এই জুটিনের ব্যবহার বাড়লে এই সমস্যা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব।
শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও পাটের ফাইবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিকের মিশ্রনই মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে তৈরি করতে সক্ষম হবে এই জুটিন। যদি বাণিজ্যিকভাবে এই জুটিন উৎপাদন করা হয় তবে এই জুটিন তৈরির সময় আরো কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে প্রয়োজন হবে না কোনো বিশেষ কারিগরির এবং প্রয়োজন হবে না গ্যাস, বিদ্যুৎ বা অন্য বিশেষ কোনো জ্বালানীর।
এই জুটিন অন্যান্য ঢেউটিন থেকে শতভাগ অধিক মজবুত। যদি এই জুটিনের ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পায় তবে কমিয়ে আনা সম্ভব পরিবেশের ক্ষ’তি এবং সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
ড. মোবারক আহমেদ খান একজন বিজ্ঞানী যিনি পাটের বাণ্যিজ্যিক ব্যবহার ও সম্ভাবনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯০-এর দশক থেকে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ডাটাবেজ স্কোপাসের তথ্যানুসারে, বৈশ্বিকভাবে পাট বিষয়ক গবেষণায় তাকে প্রধান একজন বিজ্ঞানী বলে মনে করা হয়।
তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানীক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পাট থেকে উদ্ভাবিত সোনালী ব্যাগ। পাটের তৈরি জুটিন নাম ঢেউটিন, পাটের তৈরি হেলমেট ও টাইল্স।
পাট বিষয়ক গবেষণায় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ড. মোবারক আহমেদকে ২০১৫ সালে স্বর্ণপদক প্রদান করে।
এছাড়া তিনি ২০১৬ সালে জাতীয় পাট পুরস্কার ও ২০১৭ সালে ফেডারেশন অব এশিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি পুরস্কারে ভূষিত হন। বিশ্বের বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তার কাজের ওপর নথিপত্র প্রকাশ করে। ১৯৯৮ সালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তথ্যসূত্রের প্রকাশনা ‘হুজ হুতে’ তার নাম প্রকাশ করা হয়।