পাহাড়ে জমি লিজ নিয়ে মাদ্রাসা তৈরী এবং তার আড়ালে জ’ঙ্গি ট্রেনিং ক্যাম্প

0

সময় এখন ডেস্ক:

পাবর্ত্য অঞ্চলে পাহাড়ের জমি লিজ নিয়ে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল। সেখানে জ’ঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।

জেএমবির আমিরসহ গ্রেপ্তার ৩ জনের বরাত দিয়ে তিনি এসব তথ্য জানান। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন সাইদনগর এলাকা থেকে জেএমবির আমিরসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ৩ জন হল- জেএমবির আমির আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে আব্দুল হাদী, হাবিবুর রহমান ওরফে চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমান ওরফে রাজিব ওরফে সাগর। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থাকা ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহা’দি বই, ১টি কমান্ডো ছু’রি ও ২০ পিস জেলজাতীয় বি’স্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ে স্থানীয়দের সহায়তায় জমি লিজ নিয়ে প্রথমে মাদ্রাসা তৈরি করে তারা। পরে সেখানেই জ’ঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট দীর্ঘদিন ধরেই নব্য জেএমবি ও পুরোনো জেএমবির ওপর বিশেষ নজর অ’ব্যাহত রেখেছিল। তারই একপর্যায়ে ২৪ নভেম্বর (রোববার) রাজধানীর ভাটারার সাইদনগর এলাকা থেকে ৩ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আবু রায়হান পুরোনো গ্লোবাল জামাআতুল মুজাহিদীনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের অস্থায়ী আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল।

মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসা’বাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, আবু রায়হান টঙ্গীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা অবস্থায় ২০১০ সালে মৃ’ত তালহা এবং মৃ’ত ডা. নজরুলের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। সংগঠনের প্রতি একাত্মতা এবং বিশ্বস্ততার কারণে ২০১২ সালে সংগঠনের সিদ্ধান্তে সে কক্সবাজারে গিয়ে লেখাপড়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার দায়ী (দাওয়াতি) শাখার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম করতে শুরু করে। ওই সময় তালহা প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ১ ব্যাগ কমান্ডো ছু’রি আবু রায়হানকে দেয়।

২০১৩ সালের মাঝামাঝি সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেপ্তার আবু রায়হান জ’ঙ্গি খোকনের চাচাতো শালিকে বিয়ে করে। আবু রায়হান ওই ছু’রির ব্যাগ কক্সবাজারের নুরুল হাকিমের কাছে দেয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নুরুল হাকি সংগঠনের আরও সদস্যসহ ৩০টি কমান্ডো ছু’রি ও বি’স্ফোরকসহ গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তার হাবীবুর রহমান জেএমবির ইসাবা গ্রুপের প্রধান হিসেবে সংগঠন চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করত। সে গত বছরের ২৯ মার্চ দক্ষিণ খান থানার পীর সাহেবের বাড়িতে ডাকা’তির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়। কারাগা’র থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সে পুনরায় জ’ঙ্গি কার্যক্রম শুরু করে।

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, আবু রায়হান হচ্ছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হাম’লা চালিয়ে পলাতক জ’ঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীর শ্যালক। সালেহী নিজেকে গ্লোবাল জেএমবির আন্তর্জাতিক আমির ঘোষণা করে। তখন জেএমবির আমির ছিল খোরশেদ আলম। খোরশেদ নিহ’ত হওয়ার পর ২০১৭ সালে আবু রায়হানকে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির ঘোষণা করা হয়।

রোববার (২৪ নভেম্বর) আবু রায়হান গ্রেপ্তার বাকি ২ জ’ঙ্গি চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমানকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। হাবিবুরের বাসা ঢাকাতেই। আর রাজিবের বাড়ি নেত্রকোনার সীমান্ত এলাকায়। তার বাড়িতে নতুন জ’ঙ্গি সদস্যরা সহজেই মিলিত হতো। গ্রেপ্তার ৩ জন মূলত ডাকা’তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া জ’ঙ্গি নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের আত্মীয় মাওলানা রাকীব নামে এক ব্যক্তি বিদেশে থেকে এদের অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে -বলেন মনিরুল ইসলাম।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জ’ঙ্গিরা সবসময় হাম’লার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল এবং হাম’লার প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। তবে তাদের নেটওয়ার্ক শুরুতেই ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরা নব্য জেএমবির সাথে ইতিপূর্বে যোগাযোগ করেছে কি না তা অধিকতর জিজ্ঞাসা’বাদে বেরিয়ে আসবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর নব্য জেএমবির যে গ্রুপটি হাম’লা চালিয়েছিল, তার প্রত্যেকটিতে ৫ জনের একটি জ’ঙ্গি সেল ছিল। তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করা গেছে। ইতোমধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ২ জন এখন দৌড়ের ওপর আছে। তাদের ছবিও পুলিশের কাছে এসেছে। তাদের সেই সেল ভেঙে দেয়া হয়েছে। আর নতুন করে যাতে সেল গঠন হতে না পারে সে জন্য চেষ্টা অ’ব্যাহত রয়েছে।

পাহাড় এলাকা মানুষের যাতায়াত কম থাকায় জ’ঙ্গিরা ওই এলাকাকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, জ’ঙ্গিরা কার মাধ্যমে কীভাবে জমি লিজ নিয়েছিল সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা একজনকে চিহ্নিত করেছি, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শেয়ার করুন !
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!