সময় এখন ডেস্ক:
দুর্নীতির অভিযোগ থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছে না ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (ফমেক)। গত সেপ্টেম্বর মাসেই ফলাও করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ এবং কলেজের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিশাল দুর্নীতির চিত্র।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফমেক হাসপাতালে আইসিইউর (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রোগীকে আড়াল করে রাখার ১ সেট পর্দার দাম পড়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা! এছাড়াও কলেজের বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনাকাটায় ৪১ কোটি টাকার দুর্নীতির সব তথ্য উঠে এসেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে।
এবার অভিযোগের তীর ফমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস এম খবীরুল ইসলামের বিরু’দ্ধে। জানা যায়, বৃক্ষ রোপণ প্রকল্পে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কলেজ সংলগ্ন এলাকায় লাগানো হয় ২০০টি গাছ, সেই হিসেবে ১টি গাছ লাগাতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সাময়িক বরখা’স্ত হওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেনের ঘনিষ্ট আত্মীয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এস এম খবীরুল ইসলাম।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ডাঃ এস এম খবীরুল ইসলাম কিছু জমি-জমা ও সম্পত্তি বিক্রি করে এ টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে আত্মীয় আফজালের অ’বৈধ অর্থে গড়া বাড়ির ভাড়া তিনি নিজেই তুলছেন। ২য় আফজাল হিসাবেই ফরিদপুরে সমালোচিত ফমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এস এম খবীরুল ইসলাম। আফজালের যোগসা’জশে দুর্নীতির মাধ্যমে খবীরুল ইসলাম সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলেও জানা যায়।
ডাঃ খবীরুল এখন শত কোটি টাকার মালিক। অন্ধকারে থেকে বদলী, নিয়োগ বাণিজ্যসহ দুর্নীতি অ’নিয়ম করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আফজাল হোসেন ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪র্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী। তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে বিপুল অঙ্কের অ’বৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এই কর্মচারীর সিটি ব্যাংক ও এবি ব্যাংকে জমা রয়েছে হাজার কোটি টাকা। এমনকি তার স্ত্রী একই অধিদপ্তরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার স্টেনোগ্রাফার রুবিনা খানমও ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ির মালিক।
আফজাল গত ১ বছরে সপরিবারে বিদেশ সফর করেছেন ২৮ বারের বেশি। দুুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব অ’বৈধ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে। আফজাল ও তার স্ত্রী দেশ’ত্যাগে নিষে’ধাজ্ঞা জারির মধ্যেই উধাও হয়ে গেছেন। পরে তাদের স্থাবর-অ’স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।
এই দম্পতির নামে রাজধানীর উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডে ৩টি ৫ তলা বাড়ি রয়েছে। যার নম্বর- ৪৭, ৬২ ও ৬৬। ১৬ নম্বর রোডে রয়েছে ৫ তলা বাড়ি। বাড়ি নম্বর- ১৬। উত্তরার ১১ নম্বর রোডে রয়েছে ১টি প্লট। এসবের বাইরে সিটি ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করেছেন আফজাল। এছাড়া আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি হিসাবের তথ্যও পেয়েছে দুদক। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ও ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে তাদের অঢেল সম্পদ।
অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে তাদের বাড়ি। দুদক সেই বাড়ির সন্ধানও পেয়েছে বলে জানা যায়। আফজাল হোসেনের মাসিক বেতন মাত্র ২৪ হাজার টাকা হলেও তিনি মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিলাসবহুল একটি বাড়ি কিনেছেন। তিনি গত ১ বছরে বিভিন্ন দেশে ২৮ বারের বেশি সপরিবারে সফর করেন।
আফজাল প্রাডো, পাজেরো, হ্যারিয়ারের মতো দামি গাড়ির মালিক। তার স্ত্রী রুবিনা খানম ছিলেন একজন স্টেনোগ্রাফার। তার নামেও রাজধানী ঢাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন। দুদকের কাছে জমা দেয়া সম্পদের বিবরণীতে তারা ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি কথা জানিয়েছেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে তাদের শত কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে আফজাল তার আত্মীয় নন, এমনকি আফজালের সাথে তার কোন রকম সম্পর্ক নেই- এমন কথা সাফ জানিয়ে দিয়ে ফমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এস এম খবীরুল ইসলাম বলেন, আমি কোন অ’নিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত না, গাছ রোপণ করেছে পূর্ত ভবন ও প্রকল্প পরিচালক। তারা সব জানেন।
195