আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এই প্রথম স্বাধীনতা দিবসে দু’টি পৃথক মিছিল দেখল লেবানন। রাজধানী বৈরুতে প্রথামাফিক সরকারি সামরিক কুচকাওয়াজ তো ছিলই, তবে তার থেকে অনেক বড় মিছিল করেছিলেন দেশের গণতন্ত্রকামী বিক্ষো’ভকারীরা। শহরের ‘শহিদ স্কোয়ার’-এর সেই মিছিলে শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। সামরিক কুচকাওয়াজের আদবকায়দা ছিল না সেই মিছিলে। শুধু ছিল— মুষ্টিমেয় ‘ধনী ও অভিজাতের’ হাত থেকে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে মুক্ত করার ডাক।
এক লাফে আয়করের বিপুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৭ অক্টোবর থেকে বিক্ষো’ভ শুরু হয়েছে লেবাননে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেই বিক্ষো’ভ অনেক বড় মাপের আন্দোলনের চেহারা নেয়। শুধু কর ব্যবস্থা নয়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর ডাক দিয়েই পথে নেমেছেন বিক্ষো’ভকারীরা। যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ কমবয়সি মেয়েরা। স্বাধীনতা দিবসের সমাবেশেও সামনের সারিতে ছিলেন দেশের তরুণীরাই।
এই বিক্ষো’ভরত মেয়েদের উদ্দেশে প্রতিবেশী সব রাষ্ট্র থেকে উড়ে আসতে শুরু করেছে নানা ব্য’ঙ্গ-বি’দ্রুপ। পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিক্ষো’ভরতাদের উদ্দেশে লাগাতার যৌ’ন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। সেই সব সংবাদমাধ্যমের মধ্যে একদম সামনের সারিতেই রয়েছে সৌদি আরবের কয়েকটি দৈনিক। লেবাননের মহিলা আন্দোলনকারীদের ‘ক্লোজ় আপ’ দিয়ে সেই সব দৈনিকে খবরের শিরোনাম— ‘সব সুন্দরীরাই রাস্তায় নেমেছেন’ বা ‘শুধু সুন্দর নয়, বদমে’জাজিও’। ছবির ক্যাপশনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘মিষ্টি সোনা’, ‘নেকু-পুষু’ ধরনের শব্দবন্ধ।
শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, পশ্চিম এশিয়ার ক্ষমতার অলিন্দে ঘোরাফেরা করেন এমন বহু পুরুষই লেবাননের মেয়েদের নিয়ে ব্য’ঙ্গ-বি’দ্রুপ চালিয়ে যাচ্ছেন। মিশরের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ছেলে আলা মোবারক যেমন তাদের দেশে ২০১১-র গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, ‘তখন যদি এই সব সুন্দরী বিপ্লবে অংশ নিতেন, তা হলে আমি আর আমার ভাইও বাবার বিরু’দ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিতাম!’ মিশরের ধনকুবের শিল্পপতি নাগিব সাওয়ারিসের আবার মন্তব্য, ‘সব সময়েই টিভিতে লেবাননের বিক্ষো’ভ দেখছি। শুধু স্ত্রী ঘরে ঢুকলেই চট করে চ্যানেল পাল্টে দিই।’
সমাজতাত্ত্বিকেরা বলছেন, লেবাননের বিক্ষো’ভরত তরুণীদের এ ভাবে শুধু ‘মেয়ে’ তকমা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এক দিকে যেমন আরব পুরুষের লি’ঙ্গ-বৈ’ষম্যমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে, তেমনই বোঝা যাচ্ছে, লেবাননের মেয়েরা যে ভাবে ‘স্বাধীনতা’ উপভোগ করেন, তা নিয়ে যথেষ্ট অ-স্বস্তিতে পশ্চিম এশিয়া। হাজারে হাজারে মেয়ে পথে নামছেন, ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের বিরু’দ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন, এটাই মেনে নিতে পারছেন না পশ্চিম এশিয়ার পুরুষ। সেই অ-স্বস্তি থেকেই আন্দোলনের দিকটিকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে মন্তব্যে ব্যস্ত থেকেছেন তারা।
অবশ্য অন্যান্য দেশের মহিলাদের পাশে পেয়েছেন লেবাননের মেয়েরা। বৈরুতের বিক্ষো’ভকারীদের বার্তা দিয়ে মিশরের এক মহিলা টুইট করেছেন, ‘আমাদের দেশের ছেলেরা আপনাদের পোশাক দেখতে ব্যস্ত। আপনারা বিপ্লব চালিয়ে যান।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক সৌদি মহিলার মন্তব্য, প’র্ন ছবির বাইরে মেয়েদের কী রকম দেখতে, জানেই না সৌদি পুরুষ। আপনারা সেটাই তাদের দেখিয়ে দিলেন!
সূত্র: আনন্দবাজার