ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ঘোষিত অনু-প্রবেশকারীর তালিকায় নাম থাকার পরও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনু-প্রবেশকারী রফিকুল ইসলাম নামে এক নেতা। দল বদলের আগে তিনি ওই ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। গত সোমবার বালিয়াডাঙ্গীর ভানোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ইউনিয়নের হলদিবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ওয়াহাবের সভাপতিত্বে প্রথম পর্বের আলোচনা সভায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায়সহ উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলের ২য় অধিবেশনে ভানোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম রফিক।
এদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বিএনপি-জামায়াত থেকে দলে অনু-প্রবেশকারী রফিকুল ইসলামের বিরু’দ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক হাম’লা-মামলার শি’কার আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম মামুন।
অভিযোগ পত্রে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তার অবর্তমানে তার বাবাকে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক হাম’লা-মামলার বিবরণ তুলে ধরেন এবং নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক যে সেই সময় আওয়ামী পরিবারগুলোসহ তার ওপর চালানো নির্যা’তনের বর্ণনা দেন।
সেখানে তিনি আরও উল্লেখ করেন, রফিকুল ইসলাম বর্তমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একান্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি ও তার ছোট ভাই মানিক ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবর রহমান হল ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।
এ বিষয়ে কথা হলে জাহাঙ্গীর আলম মামুন জানান, যে ব্যক্তি বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী পরিবারগুলোর ওপর পা’শবিক নির্যা’তনসহ নানাভাবে হয়রা’নি করেছে তাকে আজ আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরিক্ষীত নেতাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সুবাদে কাউন্সিলের আগে নিজের পছন্দের বিএনপি-জামায়াতের লোকদের ওয়ার্ড কমিটির নেতা বানিয়েছেন। এমনকি নিজের আধি’পত্য বজায় রাখতে ৯নং ওয়ার্ডের এক জামায়াত পরিবারের সদস্যকে সাধারণ সম্পাদক ও ৮নং ওয়ার্ডের সভাপতি নির্বাচিত করেন বিএনপি পরিবারের এক সদস্যকে।
এছাড়াও ভানোর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে ভানোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া রফিকুল ইসলামের বড় ভাই লিয়াকত উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতিসহ বর্তমানে জেলা বিএনপির সক্রিয় সদস্য ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের আস্থাভাজন।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের শুদ্ধি অভিযানে নেমে নিজে ঘোষণা দিয়েছেন দলে যারা অনু-প্রবেশকারী তারা যাতে কোনোভাবেই দলীয় পদ-পদবি না পায়। এমনকি তিনি, যারা দলের অনু-প্রবেশকারী তাদের নামের তালিকা পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন, যাতে কেউ দ্বিধা-দ্ব’ন্দ্বে না পড়েন। কিন্তু আজ তার নির্দেশনাও উপেক্ষিত। তবে আমি আশাবাদি নেত্রী নিজেই যেহেতু এসব বিষয় মনিটরিং করছেন, সকল ষড়-যন্ত্র অনুধাবন করেন তিনি দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে দলে অনু-প্রবেশকারী রফিকুল ইসলাম কীভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন- এমন প্রশ্নে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায় জানান, নির্বাচিত রফিকুল ইসলামের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া নিয়ে এর আগে ২০১২ সালের কাউন্সিলের সময় উত্তে’জনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই সময় ১৫ দিনের জন্য কাউন্সিল স্থ’গিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
উল্লেখিত সময়ে আমি ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকায় অবস্থান করি। পরে এসে শুনি তাকে পরবর্তীতে বালিয়াডাঙ্গী অডিটোরিয়াম হলে কাউন্সিল অধিবেশন করে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া রফিকুল যে দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে তার কোনো ডকুমেন্ট আমার কাছে নেই। শুধু জানি সে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। তবে কীভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে সেটাও আমি জানি না।
আর অনু-প্রবেশকারী সংক্রান্ত কোনো চিঠি কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত আমরা হাতে পাইনি। এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ দিকে অনু-প্রবেশকারীর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহা. সাদেক কুরাইশী জানান, দলে যাতে অনু-প্রবেশকারীরা পদ-পদবি না পায় সেদিকে খেয়াল রেখে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠিত হচ্ছে। তারপরও যদি এরকম ঘটনা ঘটে তবে অভিযুক্তের বিরু’দ্ধে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।