‘প্রয়োজনে ভিক্ষা করে খাব, তবুও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিক্রি করব না’

0

নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গোপালপুর বাজার। একটি ব্যস্ততম এলাকা এটি। তবে বাজারের একটি জায়গায় এসে সবারই যেন ব্যস্ততা থমকে দাঁড়ায়। কাজ ভুলে সবাই একটু দাঁড়িয়ে পড়েন। দেখেন কাঠের তৈরি বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য। এটি অন্যান্য ভাস্কর্যের মতো নয়, দেখলে মনে হয় যেন জীবন্ত সেই বঙ্গবন্ধু সামনে চলে এসেছেন।

২০১২ সালের আগস্ট থেকে এভাবে সবার নজরে আসছে শিল্পী গোলাম মোস্তফার তৈরি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি।

বারহাট্টা বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ সোহাগ জানান, তিনি শিল্পী গোলাম মোস্তফার ছেলের বন্ধু। বন্ধুত্বের খাতিরে ছোটবেলা থেকেই শিল্পীর বাড়িতে তার যাতায়াত ছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাজ শুরু করার সময় থেকে তিনি এটি দেখেছেন। কাজ শেষ হওয়ার পর গোলাম মোস্তফার প্রতিভায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার দেখা যে কোনো ভাস্কর্যের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এটি। কারণ শুধু কাঠ দিয়ে এমন নিখুঁতভাবে কোনো কিছু তৈরি করতে আমি এর আগে কখনো দেখিনি। বঙ্গবন্ধুর আকার, আকৃতি সবদিক ঠিক রেখে এটিকে বানানো হয়েছে। তার এই কাজটি আমাদের নেত্রকোনাসহ সারাদেশের জন্য একটি গর্ব।’

স্থানীয়দের সদিচ্ছার অভাবে ২০১২ সাল থেকে অনেকটা অ’নাদরে রয়ে গেছে এই অনন্য ভাস্কর্যটি।

পারভেজ বলেন, ‘যে গুরুত্ব এই কাজটির পাওয়া উচিত, তা পায়নি। সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের ইচ্ছার একটি অভাব আছে। বর্তমানে যেখানে এটিকে রাখা হয়েছে সেটিও উপযুক্ত জায়গা নয়।’

বারহাট্টা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা মনে করেন, সৃষ্টিশীল কাজের যোগ্যতা সবার থাকে না। গোলাম মোস্তফারা তাদের কাজের স্বীকৃতি না পেলে অনেকেই সৃষ্টিশীল কাজ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

গোলাম মোস্তফার কাজটি ‘অনন্য’ বলে আখ্যা দেন নেত্রকোনার বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রবিন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাস্কর্যটি দেখেছি। এটি একটি অনবদ্য সৃষ্টি। সৃষ্টিশীল কাজের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আমার মতে এটির মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন।’

২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর ভাস্কর্যটি তৈরি করতে কাজ শুরু করেন শিল্পী গোলাম মোস্তফা। কেবল কাঠ দিয়ে তিনি এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন। ৩ বছর অ-ক্লান্ত পরিশ্রমের পর ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর কাজ শেষ হয়। ৮ মাস পর ২০১২ সালের ২১ আগস্ট সবার জন্য এটির প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়।

সেই থেকে বারহাট্টা সদর উপজেলার গোপালপুর বাজারে একটি দোকানে রাখা হচ্ছে জাতির জনকের প্রতিকৃতিটি। প্রতিদিন অনন্য এই শিল্পকর্ম দেখতে ভিড় করেন আশপাশের মানুষ। বাদ যাচ্ছে না পাশের জেলার বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মীরাও। শুধু কাঠ দিয়ে তৈরি কারো পূর্ণাঙ্গ ভাস্কর্য এটিই প্রথম। কাঠে ঘুণ ধরে বা অন্য কারণে যেন ন’ষ্ট না হয়ে যায়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই এটিকে নির্মাণ করা হয়েছে। ভাস্কর্যের প্রতিটি অঙ্গ নাড়াচাড়া করানো যায়। ফলে দাঁড়ানো ও বসা সহকারে সব ভঙ্গিমায় রাখা যায় জাতির পিতার এই ভাস্কর্যটিকে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ভাস্কর্যটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় জীবন্ত বঙ্গবন্ধু সামনে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাস্কর্যটির একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর এই একই মন্তব্য বারবার উঠে এসেছে।

কথা হয় শিল্পী গোলাম মোস্তফার সঙ্গে। তার কাজের শুরু এবং বর্তমান সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, ‘জীবন তো একদিন শেষ হয়ে যায়। আমিও চলে যাব। কিন্তু আমি চাই আমাকে সবাই আমার কাজে মধ্যে মনে রাখুক। তাই বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্যটা বানাইছি। আমি চাই, আমি মারা যাওয়ার পর মানুষ আমাকে বঙ্গবন্ধুর এই ছবির মাধ্যমে মনে রাখুক।’

এরই মধ্যে অনেকেই বড় মাপের অর্থের অঙ্কে কিনতে চেয়েছেন এই শিল্পকর্মটি। তবে বিক্রি করার জন্য এটি বানাননি বলে জানান গোলাম মোস্তফা। বলেন, ‘প্রয়োজনে আমি ভিক্ষা করে খাব। তারপরেও বঙ্গবন্ধুর ছবি বা ভাস্কর্য বিক্রি করে বা এর অজুহাতে কারো থেকে ১ টাকা নিয়া খাইতে আমি রাজি না।’

পেশায় চিত্রশিল্পী গোলাম মোস্তফা। জানা গেছে, জাতির জনকের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ছবি এঁকেছেন তিনি। আর সেগুলোও টাকার দরে বিক্রি করেন না। অন্যের ছবি এঁকে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে গোলাম মোস্তফার।

মারা যাওয়ার আগে এই শিল্পকর্মটি জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে চান গোলাম মোস্তফা। তার বিনিময়ে কোনো কিছু পেতে চান না বলে জানান প্রতিভাধর এই শিল্পী।

শেয়ার করুন !
  • 151
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!