ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
বিধবা তাসলিমা বেগম ২০ বছর আগে স্বামী আবুল কালামকে হারিয়েছেন। এরপর ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর সদর ইউনিয়নের আঙ্গারিয়া গ্রামে স্বামীর ভিটায়।
বিধবা তাসলিমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল রাজাপুর – কাঁঠালিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে থাকা ১৩ শতাংশ জমিতে স্বামীর ভিটা ও একটি দোকান। অসহায় এই পরিবারটির শেষ আশ্রয়টুকু আত্ম’সাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন একই এলাকার বাসিন্দা আঙ্গারিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক ও রাজাপুর থানা মসজিদের ইমাম মাওলানা আমিনুল ইসলাম নেছারি।
এ বিষয়ে পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়ে না পেয়ে ইমামের অত্যা’চার থেকে বাঁচতে অবশেষে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাজাপুর প্রেস ক্লাবে একটি লিখিত অভিযোগ পাঠ করেছেন তাসলিমা বেগমের মেয়ে আয়শা আক্তার। ইমাম মাওলানা আমিনুল ইসলাম নেছারির বিরু’দ্ধে অসহায় বিধবার সম্পত্তি জোর’পূর্বক আত্ম’সাতের অভিযোগ ওঠায় দারুণ চ’টেছেন থানা মসজিদের মুসল্লিরা।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রথমে টাকার লোভ দেখিয়ে বাড়িটি কিনে নিতে চায় ইমাম আমিনুল ইসমাল। এতে রাজি না হওয়ায় পরিবারটিকে এলাকা ছাড়া করতে একের পর এক কৌশলের আশ্রয় নেন আমিনুল। বিধবার সংসার চলতো স্বামীর রেখে যাওয়া একটি দোকান থেকে। দোকানটি চালাতেন বিধবার একমাত্র ছেলে আব্দুর রহমান।
অসহায় পরিবারটির আয়ের উৎস বন্ধ করতে আব্দুর রহমানের নামে এক নারীকে দিয়ে নারী নির্যা’তনের একটি মিথ্যা মামলা করান আমিনুল। এরপর থেকেই আব্দুর রহমান এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। এতে পরিবারটি আরো অসহায় হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে বাড়ি ছাড়তে দফায় দফায় হুম’কি দেওয়া হয় পরিবারটিকে।
বিধবা তাসলিমার সাথে থাকা তার একমাত্র মেয়ে আয়শাকে কু-প্রস্তাব দেন ইমাম আমিনুল। যাতে আয়শাও অন্যত্র চলে যায়। এরপর গত ২ মাস ধরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি। অনাকা’ঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিধবা মা ও মেয়ে রাতে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে থাকছেন। এই সুযোগে বাড়ির চারপাশে থাকা সমস্ত বেড়া ও বেষ্টনি সরিয়ে ফেলা হয়। ভেঙে ফেলা হয় রান্না ঘরের চুলাও।
বিধবা তাসলিমা বেগমের মেয়ে আয়শা বলেন, রাতে কেউ বাড়ি না থাকার সুযোগে গত ২ মাস ধরে এক ভিন্নমাত্রার অত্যা’চার শুরু করেছে আমিনুল ও তার লোকজন। প্রতিদিন সকালে বাড়িতে এসে দেখি, বিভিন্নস্থানে মানুষের মলমূত্র ছড়িয়ে আছে। ঘরের তালায় মানুষের মল মাখানো।
বাড়ির পাশেই মাদ্রাসায় টয়লেট থাকার পরেও মাদ্রাসার ছেলেরা আমাদের দরজা-জানালার সামনে এসে প্রস্রাব করে। তাদের নিষেধ করলে বলে, নেছারি হুজুরের নির্দেশ’। এমনকি আমিনুল নিজেও আমাদের জানালার সামনে প্রস্রাব করেন। এ সময় ঘর থেকে আমরা কাশি দিলে তিনি হাসেন এবং আমাদের ব্য’ঙ্গ করেন।
এসব অ-সামাজিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বললে ইমাম আমিনুল বলেন, আমি থানা মসজিদের ইমাম, থানার ওসি আমার পকেটে। তোরা দুই মহিলা আমার কী করবি? তাড়াতাড়ি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানা মসজিদের এক মুসল্লি বলেন, ইমাম সাহেব সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল করে সাধারণ মানুষকে ভালো হওয়ার নসিহত করেন। অথচ ইমামের বিরু’দ্ধেই অসহায় মানুষের সম্পত্তি জব’র দখ’লের অভিযোগ আসাছে। এটা কাম্য নয়। এই ইমামের পেছনে আর নামাজ আদায় করব না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমাম আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সামাজিকভাবে হে’য় প্রতি’পন্ন করতে এসব অপ-প্রচার চালানো হচ্ছে। ওই জমির প্রকৃত মালিকানা ওদের না। আমরা প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে সম্প্রতি জমিটা কিনেছি।
তাহলে এত বছর ওই পরিবারটি কীভাবে ওই জমিতে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা আমি সঠিক জানি না।’
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটি সাধারণ ডায়েরির আবেদন পেয়ে বিষয়টি আমলে নিয়েছি। ঘটনার তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
17.9K