খাস জমি দেখিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে আস্ত নদী দখ’ল!

0

যশোর প্রতিনিধি:

যশোরের ঝিকরগাছার ভায়না নদীকে কাগজপত্রে ধানী জমি দেখিয়ে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করছে একটি মহল। এ জন্য তারা নদীটি সরকারের কাছ থেকে ইজারাও নিয়েছে! ব্যাপক জা’লিয়াতির মাধ্যমে এই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়ার মাধ্যমে নদীটিকে মে’রে ফেলার সমস্ত আয়োজনই সম্পন্ন করা হয়েছে।

রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা তাহের আলী মোল্যা (৭৫) বলেন, ছোটবেলায় আমরা ভায়না নদীতে গোসল করেছি, সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি, পাট জাগ দিয়েছি। এখন দ’স্যুরা সেই নদী দখ’ল করে নিয়েছে; ঘের বানিয়ে মাছ চাষ করে। আমাদের ওই পানি ব্যবহার করতে দেয় না। এখন পাট জাগ দিতে ২-৩ কিমি দূরে বাঁওড়ে যেতে হয়।

গৃহবধূ রেবেকা খাতুন (৪৫) বলেন, আমাদের হাঁস-মুরগিও নামতে দেয় না। গোসল করতে নামলে তারা মা’রধর করে। ২০ বছর আগেও আমরা এটি নদী হিসেবেই দেখেছি।

স্থানীয়দের দাবি, ভায়না নদীর সাথে শার্শা উপজেলার বেতনা নদীর সংযোগ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বেতনা নদীর পানি বেড়ে ভায়না নদী দিয়ে বের হয়। কিন্তু নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি নিষ্কা’শনে বাধার কারণে পাড়ের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতায় ভো’গান্তি পোহাতে হয়। বর্ষাকালে এখানকার প্রায় ২০টি গ্রাম তলিয়ে যায়। এ কারণে নদী পুনরুদ্ধারের দাবিতে মানব-বন্ধনও করেন তারা। একইসঙ্গে এলাকার ৩ শতাধিক নারী-পুরুষের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হলেও কোনও ফল হয়নি বলেও দাবি স্থানীয়দের।

তাদের দাবি, এই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) রশিদ ও তার জামাই (মেয়ের স্বামী) লোকমানের নেতৃত্বে কয়েকজন নদীটি দখ’ল করে সেখানে মাছ চাষ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ৭ জনের নামে নদীটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ১ বছর পর তাদের দেওয়া বরাদ্দ জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে নবায়ন করতে মেম্বার আব্দুর রশিদ দায়িত্ব নেন। কিন্তু রশিদ অন্য ৬ জনকে জানান, নদী আর তাদের নামে নেই, অন্য ৪ ব্যক্তি এটি লিজ নিয়েছে এবং আবার তার (রশিদ মেম্বার) কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে, রশিদ মেম্বারের সঙ্গে নদী লিজ নেওয়া অন্য ৬ সদস্য জানতে পারেন, রশিদ মেম্বার ও তার জামাই কৌশলে নদীটির দখ’ল তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তারা রেজিস্ট্রি ও তহশীল অফিসে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ঝিকরগাছা উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের কোরবান আলী, শ্রীরামকাটি গ্রামের নূর মোহাম্মদ মোল্লা ও দিদার বক্স মোল্লা এবং কামারপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফ জাল কাগজ তৈরি করে হাল জরিপের সময় রেকর্ড এবং জা’লিয়াতির মাধ্যমে নদীকে ধানী খাস জমি দেখিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়েছে।

জানতে চাইলে দখ’লদার মো. লোকমান হোসেন দাবি করেন, ১৬ নম্বর রাধানগর মৌজায় ৫৪৮ দাগের ওই জমির মালিক ছিল যথাক্রমে নুর মোহাম্মদ, দিদার বক্স মোল্লা, কুরবান আলী দফাদার ও আব্দুর রউফ। আমি তাদের কাছ থেকে সেটি ক্রয় করেছি। স্থানীয় একটি চক্র তাদের ক্রয়কৃত জমিতে করা মাছের ঘের দখ’লের পাঁয়তারা করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই জমি নদীর নয়, ধানী জমি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য তবিবর রহমান বলেন, কী করে যেন রাধানগর গ্রামের সাবেক মেম্বর আব্দুর রশিদ ও তার জামাই লোকমান হোসেন নদী দখ’ল করে বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে ফেলেন। কিন্তু গ্রামবাসীর বাধায় তারা তাদের দখ’লে রাখতে পারেনি। পরে প্রভাবশালী লোকজনকে দিয়ে তারা নদীতে মাছ চাষ করাচ্ছেন।

এদিকে ইজারার বিষয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়নের তহশীল অফিসের নায়েব নেসার উদ্দিন আল আজাদ বলেন, লোকমান হোসেনের দাবি মিথ্যা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জা’লিয়াতি করে নদীকে ধানী জমি হিসেবে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। এসএ পর্চায় এটি নদী হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আরএস পর্চায় রয়েছে ধানী জমি। ধানী জমি হিসেবে যে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে, তাতে ব্যাপক অসঙ্গতি রয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি দখ’লদারদের বিরু’দ্ধে দেওয়ানি মামলা করবেন বলেও জানান।

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, নদী কখনও খাস জমি হিসেবে লিজ দেওয়া হয় না। বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হবে।

শেয়ার করুন !
  • 177
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

এই ওয়েবসাইটের যাবতীয় লেখার বিষয়বস্তু, মতামত কিংবা মন্তব্য– লেখকের একান্তই নিজস্ব। somoyekhon.net-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এর মিল আছে, এমন সিদ্ধান্তে আসার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে somoyekhon.net আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো প্রকার দায় বহন করে না।

Leave A Reply

error: Content is protected !!