সময় এখন ডেস্ক:
জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষ’তিকর বিবেচনায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় হাকীমপুরী জর্দা বাজার থেকে সরিয়ে নিতে আদালতের আদেশ এসেছে। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আদালত সোমবার এই নির্দেশ দেয়।
এই জর্দা বাজার থেকে তুলতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবারই নিরাপদ খাদ্য আদালতে মামলাটি করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক কামরুল হাসান।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তাদের (হাকীমপুরী) কারখানা থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্ট করি। তবে তার ফলাফলও আগের মতোই খারাপ এসেছে। তাদের জর্দায় কয়েকটি ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা জর্দার মধ্যে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
প্রায় ২ মাস আগে বাজার থেকে ২২ ধরনের জর্দা, খয়ের ও গুলের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে বিএফএসএ, যেখানে ক্ষ’তিকর মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। যদিও এ ধরনের ভারী ধাতু এই পণ্যগুলোতে থাকার কথা নয়।
বিএফএসএ গত ৩১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ২২টি নমুনায় ল্যাব পরীক্ষায় প্রতি কিলোগ্রামে ০.২ মিলিগ্রাম থেকে ১১.২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্ষ’তিকর বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেখানে বাজারের জনপ্রিয় হাকীমপুরী জর্দার প্রতি কেজিতে ০.২৬ মিলিগ্রাম সিসা, ০.৯৫ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম এবং ১.৬৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম পাওয়া যায়।
বিএফএসএর সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করার পর থেকেই একটু ভিন্ন কৌশলে প্র’তিবাদ শুরু করে হাকীমপুরী জর্দার মালিক হাজি মো. কাউছ মিয়া। তার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদাদিত জর্দায় কোনো প্রকার ক্ষ’তিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না দাবি করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে, দাবি করেন, বিএফএসএ যেসব জর্দা পরীক্ষা করেছে, সেগুলো আসলে নকল জর্দা, হাকীমপুরীর নয়।
পত্রিকার মাধ্যমে প্র’তিবাদ জানানো হলেও বিএফএসএর কাছে কোনো ধরনের প্র’তিবাদ পাঠানো বা আলোচনায় বসেনি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তবে বিএফএসএর কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং ফ্যাক্টরি থেকে পুনরায় জর্দার ৪টি নমুনা সংগ্রহ করে। এই নমুনাগুলোতেও প্রথমবারের মতোই সীসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএফএসএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাজারে যত হাকীমপুরী জর্দা রয়েছে, সেগুলো বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বাজারে যত জর্দা পাওয়া যাবে তা বা’জেয়াপ্ত করা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরু’দ্ধে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
মামলার বাদী বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিদর্শক কামরুল হাসান বলেন, নিরাপদ খাদ্য আদালতের বিচারক মেহেদী পাভেল সুইট মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন। পাশাপাশি এই সময়ের মধ্যে হাকীমপুরী জর্দার সংশ্লিষ্ট লটের সব মালামাল বাজার থেকে সরাতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে নির্দেশ দেন।
বিএফএসএ বলছে, যে ভারী ধাতুগুলো জর্দায় পাওয়া গেছে সেগুলোর মূল উৎস রঙ। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা তাদের প্রয়োজনে এসব রঙ আমদানি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফানির্চারের বার্নিশে এসব রঙ ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এদিকে হাকীমপুরী জর্দার গায়ে কোনো ধরনের ব্যাচ নম্বর বা লট নম্বর প্রদান করা হয় না বলে জানা গেছে। ফলে কোন ব্যাচ থেকে কোন ব্যাচ পর্যন্ত তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
হাকীমপুরী জর্দা সারাদেশেই পরিচিত একটি পণ্য, যা কোটি কোটি মানুষ খায় বলে ধারণা করা হয়। যদিও এর কোনো সঠিক হিসাব সংশ্লিষ্টদের কাছে নেই।
তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, মজাদার-সুগন্ধি এই জর্দা দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে মানুষ ক্যান্সারের মতো দাঁতের মাড়ি ও লিভারে দুরা’রোগ্য ব্যা’ধিতে আক্রা’ন্ত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক হাজি মো. কাউছ মিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক সর্বমোট ১৪ বার সেরা করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন। মামলার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে সোমবার তার মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, প্রথমবার পরীক্ষা করে হাকীমপুরীসহ মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ৬টি প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও ৩টি প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষ’তিকর এসব ভারী ধাতু পায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষা করা পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল- গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ঈগল গুল, মোস্তফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হাকীমপুরী জর্দা,
গুরুদেব জর্দা, শাহজাদী জর্দা (নির্মল), মহিউদ্দিন জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহি হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা, শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।